নোয়াখালী আ.লীগের ক্ষমতা যাচ্ছে কাদের কাছে, চোখ এখন সেদিকে
৫ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই আলোচনা জোরালো হচ্ছে—কারা হবেন জেলায় আওয়ামী লীগের আগামীর কান্ডারি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এর মধ্যে তিনজন নিজেদের প্রার্থী হিসেবে অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
তাঁরা হলেন সভাপতি পদে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন ও সহিদ উল্যাহ খান সোহেল। সহিদ উল্যাহ খান নোয়াখালী পৌরসভার টানা দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।
অপর দিকে সরাসরি প্রার্থী হওয়ার কথা স্বীকার না করলেও দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিকে চেয়ে আছেন অন্তত দুজন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী।
একরামুল করিম নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিত লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় ওই কমিটি বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান। শেষে তাঁর ঠাঁই হয় বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ আলী ও একরামুল করিম চৌধুরী সম্মেলনে কোনো পদের জন্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেবেন না বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ–ও বলেছেন, তাঁদের আস্থার জায়গা দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাঁরা যদি কোনো দায়িত্ব দেন, তা অবশ্যই নিতে রাজি আছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর। জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে আরেক প্রার্থী ছিলেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান। সম্মেলন ঘিরে সেদিন একরামুল করিম চৌধুরী ও সহিদ উল্যাহ খানের সমর্থকদের মধ্যে শহরে ব্যাপক সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৭০ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে যে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, সেটি সবার জানা। সে অবস্থা থেকে দলকে উত্তরণে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে, ওই কমিটির নেতৃত্বে বর্তমানে পুরো জেলার আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত বলা যায়।
ওই সদস্যদের মতে, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই ইতিপূর্বে দলের জেলা কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। কিন্তু কোণঠাসা করে রাখার কারণে দলে ভূমিকা পালন করতে পারেননি তাঁরা। যা তাঁরা গত এক বছরে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছেন। সুতরাং তাঁদের মধ্য থেকে দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন হবে, এটাই প্রত্যাশা করেন তাঁরা।
আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে এরই মধ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং উপজেলা সম্মেলনগুলো শেষের পথে। সম্মেলন নিয়ে কোথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ থেকে পরিষ্কার বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বের প্রতি সব পর্যায়ের আস্থা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সহিদ উল্যাহ খান বলেন, আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি আগামী ৫ ডিসেম্বরের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী। এর আগে ২০১৯ সালের সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ছিলেন। এখন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটি তিনি মেনে নেবেন।
অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৪ বছরে জেলায় আওয়ামী লীগে যা কেউ করতে পারেননি, আমরা আহ্বায়ক কমিটি সেটা করে দেখিয়েছি। আমরা দলকে তৃণমূল থেকে সুসংগঠিত করেছি।’ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে জানিয়ে শিহাব উদ্দিন বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি তিনি মেনে নেবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলনে তিনি সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন।
সম্মেলনে আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে ভাবনা জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চাওয়া যোগ্য ব্যক্তির হাতে যেন দলের নেতৃত্ব যায়।