বিনা মূল্যে সরকারি বাড়ি গৃহহীনদের আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সারা দেশের গৃহহীনদের বিনা মূল্যে ঘর দেওয়ার জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনা মূল্যে বাড়ি পাওয়ায় গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা ফিরে এসেছে। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঈদ উপহার হিসেবে ঘরগুলো দিয়েছি। আমাদের সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশবাসীর সেবা করা। কারণ, দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা থাকায় তাঁরা বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এককভাবে ২৩৩টি আসন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিল। কাজেই যে মানুষগুলো আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, তাদের সেবা করাই আমাদের দায়িত্ব। ঠিক আমার বাবা যেভাবে নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষের সেবা করাকেই আমি কর্তব্য বলে মনে করি।’
কয়েক দিন আগে ঘূর্ণিঝড়ে (রিমাল) হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় কতগুলো ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে, তার তালিকা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যাদের ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদেরও আমরা ঘর পুনর্নিমাণে সহায়তা করব।’
‘এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা করে যাচ্ছি এবং যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমি তাদের এটুকু বলতে চাই, আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেকেই নতুন ঘর যাতে পান, সেই ব্যবস্থা ইনশা আল্লাহ আমি করে দেব এবং সেভাবেই আমরা এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি এলাকা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা এই সহায়তা পাঠাব।’
শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন। পরে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন তিনি।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে এদিন ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন।
নতুন ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারা দেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮টি এবং উপজেলা হয়েছে ৪৬৪টি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন।
প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা পাকা বাড়ি দেওয়া হচ্ছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই নামে হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার দেশের যারা ভূমিহীন-গৃহহীন আছে, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়ের ব্যবস্থা, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ফলে তাদের জীবন বদলে গেছে।’
এই সময় তিনি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ এবং প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আর সে কারণেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।’
ঘরগুলো নির্মাণের কাজে জড়িতদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর এবং জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।