সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অনিয়ম তদন্তে কমিটি

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদফাইল ছবি

‘দুস্থদের তালিকায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর স্বজনেরা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশের পর বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেছে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এক সদস্যের কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সচিব (যুগ্ম সচিব) শহিদুল ইসলাম কমিটি গঠনের জন্য চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রথম আলোর প্রতিবেদন তাঁদের নজরে এসেছে। রোববার লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও জেলা সমাজকল্যাণ কমিটির সদস্যসচিব মুহাম্মদ মতিয়ার রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ কর্তৃক ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লালমনিরহাট জেলার ১ হাজার ৬৩১ জনকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার টাকা বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়। অনুদানের অর্থ প্রকৃত উপকারভোগীরা প্রাপ্ত হয়েছেন কি না, তা তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

প্রথম আলোর ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনে আরও অনুদান দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজকল্যাণ কমিটিকে ১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও জেলা সমাজকল্যাণ কমিটির সদস্যসচিব মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের চিঠি পাওয়ার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সমাজকল্যাণ পরিষদের বণ্টন মাস্টাররোলসহ যাবতীয় নথিপত্র হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুকান্ত সরকার প্রথম আলোকে জানান, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের লিখিত নির্দেশক্রমে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা (বর্তমানে রংপুরের পীরগঞ্জে দায়িত্বরত) আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক অফিস সহকারী (বর্তমানে লালমনিরহাট সদর উপজেলায় কর্মরত) পারভীন বেগমকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠান দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও গৃহ মেরামত বাবদ সহায়তা দেয়।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বোন, বোনের মেয়েজামাই (মন্ত্রীর ভাগনিজামাই) ও মন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনেরা এই অর্থ পেয়েছেন। অর্থ পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মিজানুর রহমানের শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালকের নাম রয়েছে। এই অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের আরও ঘটনা রয়েছে।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ও গরিব, অসহায় ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজকল্যাণ কমিটিকে ১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভুয়া মাস্টাররোল দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতির’ প্রমাণ না রাখতে সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক ও অফিস সহকারী পারভীন বেগম (সদ্য বদলি হয়েছেন) নথি হারানোর ঘটনা সাজিয়েছেন।