চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে ‘প্রচার রাজনীতি’ তুঙ্গে
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভা কেন্দ্র করে পোস্টার–ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো নগর ও উপজেলাগুলো। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের নামে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টাঙিয়ে তাঁদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রতিটি প্রচারণার মূল সুর জনসভাকে সফল করা হলেও এর পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের সক্রিয় দেখানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে সংগঠনে একটি অবস্থান তৈরি করতে চাইছেন তাঁরা।
আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জনসভা অনুষ্ঠিত হবে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে। ১১ বছর পর শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে কোনো দলীয় সভায় ভাষণ দেবেন। জনসভার পর ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও ১৮ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তার আগে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে, তা নিয়ে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। সংগত কারণে নেতাদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনের রাজনীতি এখন সরগরম চট্টগ্রাম।
জনসভা সফল করার জন্য নগরের বিভিন্ন স্থানে এসব পোস্টার চোখে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার মোড়ের ট্রাফিক সংকেতবাতি, সড়কদ্বীপ, বাঁকও ঢেকে গেছে পোস্টার–ব্যানারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম, সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বর্তমান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতার নামে পোস্টার ও ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
তবে এসব ব্যানার ফেস্টুনের বেশির ভাগ টাঙিয়েছেন এই শীর্ষ নেতাদের অনুসারীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ১১ বছর পর চট্টগ্রামে জনসভা করছেন, এ জন্য নেতা–কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ–উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ নিজেকে প্রকাশ করার জন্য কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপনের জন্য নিজের ছবি দিয়ে জনসভার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা দোষের কিছু নয়।
আ জ ম নাছির উদ্দীন আরও বলেন, এই পোস্টার–ব্যানার স্বল্প সময়ের জন্য উঠেছে। সবার মূল উদ্দেশ্য জনসভা সফল করা।
নগর যুবলীগ থেকে বিদায় নেওয়া আহ্বায়ক ও দুই যুগ্ম আহ্বায়কের নামেও নগরের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবেন।
এর মধ্যে নগর যুবলীগের সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছেন। নগরের আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কে মহিউদ্দিনের নামে পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে। এ ছাড়া যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ও ফরিদ মাহমুদের পোস্টারও চোখে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. মহিউদ্দিন বলেন, জনসভা সফল করতে নিজস্ব অবস্থান থেকে প্রচার–প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নিজেকে জানান দেওয়ার কিছু নেই। এর সঙ্গে সামনের সম্মেলনের কোনো সম্পর্ক নেই। মূল লক্ষ্য জনসভায় সর্বোচ্চ জনসমাগম করা।
এ ছাড়া নগর যুবলীগ ও উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটিও শিগগির ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, মূলত জনসভার কারণে এই ঘোষণা পিছিয়ে গেছে। ছয় মাস আগে এ দুই সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও কমিটি ঘোষণা হয়নি। তবে একই সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যুবনেতা মাহবুবুল হক, এম আর আজিম, হাসান মুরাদ, দেবাশীষ পাল, নুরুল আজিমসহ বিভিন্ন নেতা পোস্টার–ব্যানার টাঙিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আগমন সামনে রেখে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতাদের প্রচারণামূলক পোস্টারও চোখে পড়েছে।
তবে সিটি করপোরেশন বলছে, এসব পোস্টার–ব্যানার সাঁটানোর জন্য সিটি করপোরেশনের অনুমতি কেউ নেননি।
জানতে চাইলে করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, অনুমতি নিলে পরিচ্ছন্ন বিভাগে অনুলিপি পাঠানো হতো। এটা রাষ্ট্রীয় বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। তাই উৎসাহ–উদ্দীপনায় প্রচারণা চলছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে এসব সরিয়ে ফেলা হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘জনসভায় বঙ্গবন্ধু ও দলীয় প্রধানের ছবির পাশাপাশি কেউ কেউ নিজেদের নামে টি–শার্ট, টুপি দিয়ে জমায়েত করবেন। তবে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সেদিকে সবার লক্ষ রাখতে হবে। আশা করি, তা হবে না।’
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনসভার দিন কে কত বড় মিছিল নিয়ে জনসভায় যাবেন, এদিন তার একটি প্রতিযোগিতাও দেখা যেতে পারে।