৬ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ল

রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য প্রথম ধাপে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের সবগুলোরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। 

এখন জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান—এসব খাতে পাঁচটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পেল। আর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনকে।

সংস্কার কমিশনগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপ বা আলোচনা বিলম্বিত হবে কি না, এখন এই আলোচনা উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারণ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দ্রুত একটি রোডম্যাপ দাবি করে আসছে।

বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ প্রশ্নে দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করবে, এমন ধারণা তাঁরা পেয়েছিলেন। এখন সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর কারণে সেই আলোচনা বিলম্বিত হতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এখন তাদের দুই সপ্তাহের মতো সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বিলম্ব হবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হবে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই সরকার দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করবে।

নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৩ অক্টোবর। এই পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়। সে হিসাবে ৩ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৬ অক্টোবর। ৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি করতে সপ্তাহখানেক বা তারও বেশি সময় লেগেছে। এরপর তাদের কার্যালয়ের ব্যবস্থা করা ও প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু সময় গেছে। সে কারণে মেয়াদ বাড়াতে হলো।

প্রথম ধাপের ছয় সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করার পর গত ৪ নভেম্বর এই কমিশনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই বৈঠকে কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আরও পড়ুন

সরকারের সঙ্গে কমিশনের প্রধানদের সভা আজ

জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার বিভাগ—এই ছয়টি ক্ষেত্রের সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার আজ শনিবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য যে পাঁচটি কমিশন গঠিত হয়েছে, সেগুলোর প্রধানেরাও আজকের বৈঠকে অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন

দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাব তৈরির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ বৈঠক হচ্ছে। এতে কমিশনগুলোর প্রধানেরা অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। এ ছাড়া কোনো কমিশনে আসা মতামত অন্য কমিশনের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। মূলত এসব আলোচনা হবে।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করবে। সে জন্য এ বৈঠক হচ্ছে।

আরও পড়ুন

প্রসঙ্গত, সংস্কার কমিশনগুলো অংশীজনদের সঙ্গে মতিবিনিময় করার পাশাপাশি লিখিতভাবেও মতামত সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ করেছে এবং জরিপও চালিয়েছে তারা। এখন এসব মতামত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে কমিশনগুলো।

গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এই পাঁচ কমিশন প্রতিবেদন দিতে সময় পেয়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন