জনগণ ‘নৌকা বর্জন’ করেছে, তাই উপজেলা ভোটে দলীয় প্রতীক নেই: আমীর খসরু

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জেসডি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা নির্বাচন বর্তমান সরকারের আরেকটি ‘ভাঁওতাবাজির’ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ৭ জানয়ারির নির্বাচনে জনগণ ‘নৌকা’ প্রতীক বর্জন করেছে। সে কারণে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার আইন বাতিল না হলেও উপজেলা ভোটে নৌকা নিয়ে তারা নির্বাচন করছে না।

আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ১০ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ সভা থেকে ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জনগণের ভোট চুরির একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। সেই প্রকল্পই চলছে উপজেলার ক্ষেত্রে।’ তিনি আরও বলেন, যেখানে ভোটই নেই, সেখানে কিসের নির্বাচন? এই ধাপ্পাবাজির প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সরকার জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে বিএনপিই বিজয়ী হয়েছে বলে দাবি করেন দলটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা দখল করলেও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ, গ্যাস, ব্যাংকের আমানত লুটকারী, সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের নিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে। আর জনগণের কাছ থেকে সেই টাকা আদায় করছে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ৩১ দফার যে আন্দোলন চলছে, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

‘বাংলাদেশে বসবাস করা কঠিন’

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, তাদের জন্য বাংলাদেশে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন কোনো দিন যায় না, যেদিন খুন, জুলুম, অন্যায় হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় “মগের মুল্লুক” বলে অত্যাচার, অনাচারের অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হতো। মগেরা তাদের দেশের নাম বদলে “মিয়ানমার” রেখেছে। আর আমাদের দেশের অবস্থা তাদের চেয়েও খারাপ।’

আবদুর রব বলেন, ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’—এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকেই ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটির কোনো মূল্যায়ন করা হয় না।

‘মানুষ বোবা হয়ে গেছে’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, দেশের মানুষ এখন অনেকটা বোবা হয়ে গেছে। মানুষকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও দেশে ভোট নেই। গণতন্ত্রও নেই। এই পরিবেশ থেকে বের হতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাষ্ট্র এক ব্যক্তির ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হয়ে গেছে। তারা যে মিথ্যার বীজ লাগিয়েছিল, তা এখন বিরাট গাছে পরিণত হয়েছে। মানুষকে তারা কথা বলতে দেবে না। অনলাইন পোর্টালগুলো তারা বন্ধ করে দেবে। মানুষের মর্যাদা, মানবিক মূল্যবোধ বলে আর কিছু নেই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, একদল লোক মনে করে উন্নয়ন হচ্ছে, তাই গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। তারা একদলীয়, কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের বৈধতার জন্য সাংস্কৃতিক বয়ান তৈরি করছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৩১ দফার ভিত্তিতে বিরোধী দলের আন্দোলন চলমান থাকবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, জেএসডির সহসভাপতি সিরাজ মিয়া ও জেএসডির স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনজীবী কে এম জাবির।

আলোচনা সভার সঞ্চালনা ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ।

লিখিত বক্তব্যে ১০ এপ্রিল প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন মৌলিক নীতি প্রয়োগ, ১৯৭২ সালের সংবিধান পরিবর্তনের জন্য গণভোট আয়োজন, অংশীদারত্বের গণতন্ত্র কায়েম, এককেন্দ্রিক ক্ষমতার পরিবর্তন ও স্বশাসিত স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়।