২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

বিএনপি

২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত কর্মী-সমর্থককে ঢাকায় আনতে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সামনের আন্দোলন-কর্মসূচি ঘিরে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে ফেলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলের নীতিনির্ধারকেরা মহাসমাবেশে ভালো লোকসমাগমের জন্য ঢাকার দিকে নজর দিচ্ছেন বেশি। তাঁরা আশা করছেন, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে মহাসমাবেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উপস্থিতি হবে।

আরও পড়ুন

আজ রোববার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির যৌথ সভায় এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ যৌথ সভা হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

এখন আর নির্দেশনার দরকার নেই। আমরা মহাসমাবেশে যাব। কারণ, বিএনপি বা জনগণের কথা বাদ দেন, এখন তো আমি আমার স্বার্থেই এ সরকারের পতন চাই। আমার বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা রয়েছে
ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকা, ১৮ অক্টোবর
ফাইল ছবি প্রথম আলো

জানা গেছে, ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যেসব বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য আছেন, সে বিভাগগুলোতে তাঁরা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যথায় ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সমন্বয় করবেন। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায়ও একজনকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব সাংগঠনিক পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থককে ঢাকার মহাসমাবেশে আনা। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জেলার নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য গতকাল শনিবার পর্যন্ত এমন কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর নির্দেশনার দরকার নেই। আমরা মহাসমাবেশে যাব। কারণ, বিএনপি বা জনগণের কথা বাদ দেন, এখন তো আমি আমার স্বার্থেই এ সরকারের পতন চাই। আমার বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা রয়েছে।’

আরও পড়ুন

তবে মহাসমাবেশ থেকে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। স্থায়ী কমিটির আগামী সভায় কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা বলছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চান।

যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজন হবে, সেই কর্মসূচিই দেওয়া হবে। পরিস্থিতিই বলে দেবে কী কর্মসূচি দিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

এ ক্ষেত্রে সরকার যদি নিজে থেকে দলীয় কর্মী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি পাল্টা কর্মসূচিতে যেতে পারে। তখন হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো পর্যায়ের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

ঢাকা জেলা বিএনপির সমাবেশে ১ দফা দাবিতে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আমিনবাজার, ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজন হবে, সেই কর্মসূচিই দেওয়া হবে। পরিস্থিতিই বলে দেবে কী কর্মসূচি দিতে হবে।

দলটির নেতাদের আশঙ্কা, মহাসমাবেশকে ঘিরে সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় বাড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষ করে লোকসমাগম কমাতে গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে বিএনপি গতকালই মহাসমাবেশের বিষয়ে অবহিত করে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মহাসমাবেশের সর্বাত্মক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ের নেতাদের পুরোনো বিরোধ মেটানো এবং বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে মহাসমাবেশ এবং পরবর্তী কর্মসূচির আগে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে সবাইকে মাঠে ফেরানো যায়।

এ রকম একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমি দলের সঙ্গেই আছি। সব কর্মসূচিতেই আমি ছিলাম। ঢাকার মহাসমাবেশেও সদলবল অংশ নেব।
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া নজরুল ইসলাম মঞ্জু

এ লক্ষ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করতে নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা ও রাজশাহীতে ঝটিকা সফরে গিয়েছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। ঢাকায় ফেরার পরই ১৮ অক্টোবর রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

জানা গেছে, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কার ও অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের আবার শর্ত সাপেক্ষে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সামনের আন্দোলন-কর্মসূচিতে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের ভূমিকা দেখতে চাইছেন নীতিনির্ধারকেরা।

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পান নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমি দলের সঙ্গেই আছি। সব কর্মসূচিতেই আমি ছিলাম। ঢাকার মহাসমাবেশেও সদলবল অংশ নেব।’