উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়া আরেকটা ফাঁদ: মির্জা আব্বাস
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়াকে আরেকটা ফাঁদ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বর্তমান সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফাঁদ পেতেছিলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নেবেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না, সেই নির্বাচনের প্রয়োজন বাংলাদেশে নেই।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি আয়োজন করে হাবিবুর রশীদ মুক্তি পরিষদ।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে পারেন, রাজতন্ত্র ঘোষণা দিতে পারেন, কিন্তু নির্বাচনের কথা আপনাদের মুখে মানায় না। ৭ জানুয়ারি কি লোকজন ভোট দিতে গিয়েছিল? এবারও (উপজেলা নির্বাচনে) যাবে না।’
উপজেলা নির্বাচনে নিজেরাই নিজেদের প্রার্থীদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না এমন কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি দাঁড়ালে কী অবস্থা হতো! আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে, সঠিক থাকবে।’
বর্তমানে ‘স্বৈরশাসন’ চলছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘জনরোষের মুখে একদিন না একদিন এই সরকারের পতন ঘটবেই। এটা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। গ্রেপ্তার করে বিশ্বে কোনো আন্দোলন থামানো গেছে বলে জানা নেই।’
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি, আন্দোলন হবে, মুক্ত হবে দেশ—আমি দেখতে পারব কি না, জানি না। কিন্তু কেউ না কেউ আসবে দেশকে মুক্ত করার জন্য। আমাদের নেতা তারেক রহমান একদিন দেশে ফেরত আসবেন। জনরোষের মুখে এই সরকারের যখন পতন হবে, তখন তিনি দেশে ফেরত আসবেন, নেতৃত্ব দেবেন দেশকে।’
আজ দেশের ‘করুণ অবস্থা’ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই জানে বলে মনে করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি জানেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। তাঁর বাসায় প্রতিদিন কমবেশি ৫০–১০০ জন আসেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ বলে আমার বাবা জেলে, কেউ বলে সন্তান জেলে, কেউ বলে ভাই জেলে, কেউ বলে স্বামী জেলে।’
খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য ‘যুদ্ধ করতে করতে মৃত্যুর পথে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন’ বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তাঁকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বলেছি। তাঁর অবস্থা ভালো নয়। তাঁরা (ক্ষমতাসীন দলের নেতারা) বলেন আইন নেই। আইন থাকবে না কেন? রাশেদ খান মেননকে বিদেশে পাঠানো হয় নাই? আ স ম আবদুর রবকে বিদেশে পাঠানো হয় নাই? আ স ম রবকে বন্দী অবস্থায় বিদেশে পাঠানো হয়েছিল।’
খালেদা জিয়া দেশের সর্বনাশ করে গেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তা ঠিকঠাক করছেন—ক্ষমতাসীন দলের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কী ঠিক করছেন, জানা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকে নজর দেন, টাকাপয়সা নাই।
কয়েকজন লোকের দিকে নজর দেন, পেট বড় হয়ে গেছে। হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ওই উন্নয়ন চুরির উন্নয়ন, দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
সরকারকে উৎখাত করা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা তো সরকার দেখি না। এই সরকারকে উৎখাত করা বা রাখার দায়দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। জনগণ যখন মনে করবে, তখন লাঠি দিয়ে এই সরকারকে ফেলে দেবে।’
কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ একসাথে চালাতে হবে। না হলে হাবিবুর রশীদের মতো অনেককে জেলে যেতে হবে। সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সর্বশেষ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।