নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি টেনে নেবে বিএনপি
আগামী ৮ অক্টোবর শুরু হবে বিভাগীয় সমাবেশ। সবশেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচিতে আর বিরতি দেবে না বিএনপি। রাজধানীর ১৬টি স্থানে ঘোষিত কর্মসূচি এখনো শেষ হয়নি। গতকাল বুধবার নতুন করে বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তিন মাসব্যাপী এ কর্মসূচি শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে।
পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের’ রূপরেখা ঘোষণা করে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিও আসছে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ লক্ষ্যে আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু করবে বিএনপি। সেটা অক্টোবরেই শেষ করবে। এরপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে সমন্বিত আন্দোলনের লক্ষ্য, ধরন ও কৌশল ঠিক করে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেটা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশের পর নতুন কর্মসূচি আসবে, বিভিন্ন আঙ্গিকে আমরা কর্মসূচি দেব। যে কথা আমরা আগেও অনেকবার বলেছি যে এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
বিভাগীয় সমাবেশের পর নতুন কর্মসূচি আসবে, বিভিন্ন আঙ্গিকে আমরা কর্মসূচি দেব।
গত জুলাইয়ে সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হলে জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি দেয় বিএনপি। অধিকাংশ জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হলেও বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বাধা ও হামলার শিকার হয়। এর মধ্যে ৩১ জুলাই ভোলায় কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং একপর্যায়ে গুলি করে। গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিম মাতব্বর ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম নিহত হন। পরদিন ১ আগস্ট থেকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি দুই নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এর মধ্যেই ৬ আগস্ট ডিজেল, পেট্রলসহ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এর প্রতিবাদে নতুন করে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় অঞ্চলভিত্তিক আলাদা করে ১৬টি সমাবেশের ঘোষণা দেয় তারা। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৩টি সমাবেশ করেছে। এর মধ্যে চারটিতে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। মিরপুরের পল্লবী, শ্যামপুর ও কামরাঙ্গীরচরের সমাবেশ কর্মসূচি এখনো বাকি আছে। এরই মধ্যে গতকাল ১০ সাংগঠনিক বিভাগের জন্য নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কর্মসূচির মধ্যে ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে গণসমাবেশ হবে। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং সবশেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। এ ছাড়া ভোলা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে নিহত নেতা-কর্মীদের স্মরণে ৬ অক্টোবর সব মহানগরে এবং ১০ অক্টোবর সব জেলায় শোকর্যালি করবে বিএনপি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ কর্মসূচি গৃহীত হয়। চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় নুরে আলম ও আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম (শাওন) ও যশোরে আবদুল আলিমসহ দলের পাঁচ নেতা–কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি হবে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকারি দল এবং কোথাও কোথাও পুলিশের বাধা ও হামলা সত্ত্বেও গত দুই মাসে ঢাকাসহ সারা দেশের কর্মসূচি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, এসব কর্মসূচিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। নেতা-কর্মীরাও উজ্জীবিত। এই ধারা বজায় থাকলে সামনে আন্দোলন আরও গতি পাবে। তবে কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক হামলার ঘটনায় দলের নীতিনির্ধারকেরা বেশ উদ্বিগ্ন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সরকারি দল ও পুলিশের হামলায় বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মী নিহত এবং ২ হাজার ৭৬৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন পুলিশের গুলিতে এবং একজন আওয়ামী লীগের হামলায় নিহত হন। এ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় ২৯৪ জনকে। মামলা করা হয়েছে ৭৫টি। এসব মামলায় মোট আসামি প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ৫ হাজার ৪৭০ নেতা-কর্মী।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ধারণা করছেন সামনে মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার আরও বাড়তে পারে। তবে এবার তাঁরা মাঠ ছাড়বেন না। তাঁদের কর্মসূচিতে উপস্থিতি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিএনপির নেতারা আশাবাদী।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনমত গড়ে তুলতে চাই, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চাই। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণ–আন্দোলন সৃষ্টি করে সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে চাই। আজকে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে একটাই দাবি, এই সরকারকে অবশ্যই যেতে হবে।’