ঢাকার বাইরে মানুষের মতামতে স্থানীয় নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে: তোফায়েল
জাতীয় পর্যায়ে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও ঢাকার বাইরে মানুষের মতামতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। ঢাকার বাইরে মতবিনিময় করতে গিয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এ চিত্র পাচ্ছে। আজ সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন।
গত ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এ কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেবে। সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে সংস্কার কমিশন। এর অংশ হিসেবে আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলনকক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সংস্কার কমিশন।
মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তাঁরা ঢাকার বাইরে গিয়ে যেসব মতামত পাচ্ছেন, সেখানে মানুষের কাছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে ঢাকায় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ বিষয়ে তেমন কিছু শোনা যাচ্ছে না। যেসব দল দ্রুত নির্বাচন চাইছে, সেসব দলের স্থানীয় নেতারা দুটি নির্বাচনের কথাই বলছেন। কেউ কেউ আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন। কেউ কেউ একই দিনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায়—এমনটা কম বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের মতামত হচ্ছে, তাঁরা একটি শূন্যতার মধ্যে আছেন। সেবা পাচ্ছেন না। কার কাছে যাবেন, সেটা বুঝতে পারছেন না। তাই তাঁরা এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও এ মতামত আছে।
এর আগে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একাধিক মতবিনিময়েও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার বিষয়ে পরামর্শ উঠে এসেছিল। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো কমিশনের কাছ থেকে কোনো সুপারিশ আসেনি। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকারের অনেক জনপ্রতিনিধিও আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে বেশির ভাগ স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করে সরকার। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের একটি সময়সীমার বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথমার্ধে এ নির্বাচন হতে পারে।
কিছু প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে সংস্কার কমিশন
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, তাঁরা বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ভাবছেন। এর মধ্যে আছে স্থানীয় সরকারে চেয়ারম্যান বা মেয়র পদে সরাসরি নির্বাচন না করে শুধু সদস্য নির্বাচন করার পর সদস্যরাই একজন মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের পদ্ধতি বাদ দেওয়া, সদস্যপদে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া যাতে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সব ধরনের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একীভূত আইন করা। তিনি বলেন, একটি এলাকায় একই দিনে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করা যায় কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে। এতে নির্বাচনের খরচ কমে আসবে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এক দিনে নির্বাচন হলে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নির্বাচন করা সম্ভব হতো।
পার্বত্য তিন জেলার স্থানীয় সরকারব্যবস্থা নিয়ে কমিশন বিশেষভাবে ভাবছে বলে জানান তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে করতে কী কী বাধা আছে, সেগুলো তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। ১৯৮৯ সালের পর এ নির্বাচন হয়নি।
মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের বেতন ও সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো, সংসদ সদস্যরা যাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, সে ব্যবস্থা করা, স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ক্ষমতা বাড়ানো, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিধান না রাখা, ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ এসেছে।