সংখ্যালঘুদের অতীত ভুলে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহ্বান মির্জা ফখরুলের

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতারা আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তিনটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেনছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতাদের অতীত ভুলে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তিনটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা। বৈঠকে অংশ নেওয়া সংগঠন তিনটি হলো বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা উদ্‌যাপন কমিটি। বৈঠকে বিএনপিপন্থী সংখ্যালঘুদের সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের বর্তমান ক্রান্তিকালে বিএনপির মহাসচিব বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় লক্ষ্যে এই কার্যালয়ে আহ্বান করেছিলেন। আমরা তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছি এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যে বৈঠকের আয়োজন করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। আমরা অনেকগুলো কথা বলেছি, মূলকথা হলো, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বাঁচতে চাই।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির দিক থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের উল্লেখ করেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘মহাসচিব যে কথা বলেছেন, তার মোদ্দাকথাই হলো—চলেন, আমরা অতীতকে সবাই ভুলে যাই। আমরা বর্তমানকে সামনে রেখে ভবিষ্যতের দিকে তাকাই। একটি মানবিক রাষ্ট্র এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করি। আমরা তাঁর এই বক্তব্যকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছি।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘যেই স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, আমরা সেই স্বপ্নে একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সবাই মিলে কাজ করতে চাই।’ বৈঠকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলো ধরা হয় এবং তা ক্ষমতায় গেলে বিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয় বলে জানান বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা।

পরে সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী—যারা রাজনৈতিক দলের নয়, যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, তারা যতই চেষ্টা করুক, বাংলাদেশের দীর্ঘকালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য ইচ্ছা করলেই নষ্ট করতে পারবে না। এবার শতচেষ্টা করেও তারা এই সৌহার্দ্য এবং ঐক্য বিনষ্ট করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) অঙ্গীকার আছে, আমরা বাংলাদেশে একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে চাই, সকল ধর্ম-গোত্র-বর্ণনির্বিশেষে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সে কথাই বিশ্বাস করেন।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য ৫ আগস্ট রাতে তারেক রহমান একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা খুব খুশি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। ২০২৪-এর এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই চেতনাকে আবার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ এসেছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করি, জবাবদিহি নিশ্চিত করি, মানুষের অধিকারগুলোকে রক্ষা করি।’

বৈঠকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারসহ অনেকে বক্তব্য দেন।