বিএনপির সিদ্ধান্ত ‘শুনে’ সমাবেশ পেছাল আওয়ামী লীগ
বিএনপি তাদের মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়েছে—গতকাল বুধবার রাতে এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই শোনা যায়, আওয়ামী লীগও তাদের তিনটি সংগঠনের সমাবেশ পিছিয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসমাবেশের দিনেই আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিনটি সংগঠন সমাবেশ করবে। ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ শীষর্ক এই সমাবেশ হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে।
এর আগে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ‘দর–কষাকষি’ হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগও সমাবেশের কয়েকটি সম্ভাব্য স্থান নিয়ে গত রাত ৯টা পর্যন্ত নানা ধরনের তৎপরতা চালায়। রাত ৯টার দিকে প্রথমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তাঁদের মহাসমাবেশ বৃহস্পতিবারের (আজ) পরিবর্তে শুক্রবার হবে। এর আধা ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগও জানায়, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ সমাবেশটি হবে শুক্রবার, বেলা আড়াইটায়।
গত রাত পৌনে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সম্প্রতি পরিবেশ মেলা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু গর্ত রয়েছে। পরিবেশ মেলার কিছু অবকাঠামোও রয়ে গেছে। ফলে মাঠটি বৃহস্পতিবার সমাবেশ করার মতো উপযোগী নয়। এক দিন কাজ করে প্রস্তুত করার পর শুক্রবার ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ হবে।
গত রাতেই বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা আগারগাঁওয়ের মাঠটি পরিদর্শন করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এমন আলোচনা আছে, বিএনপি মহাসমাবেশের মাধ্যমে ‘ঢাকা অচল’ করে দেওয়ার চিন্তা করছে। এমনকি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও ঘেরাও করতে পারে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। এ জন্য বিএনপিকে মহাসমাবেশ করতে বাধা দিতে চাইছে না সরকার। কিন্তু মহাসমাবেশের অনুমতির ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি করে, তাদের সমাবেশকে ছোট জায়গায় ঠেলে দেওয়া, এমনকি বড় জমায়েত যাতে না হয়, সেই কৌশল হাতছাড়া করতে চায় না সরকার।
এর জন্য রাস্তায় বিএনপির মহাসমাবেশের সঙ্গে জনভোগান্তির বিষয়টি প্রথমে সামনে আনা হয়।
গতকাল দুপুরের পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বিএনপিকে জানানো হয়, নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি তারা পাচ্ছে না। একইভাবে আওয়ামী লীগকেও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে বারণ করে পুলিশ। অবশ্য ততক্ষণে সেখানে মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয় আওয়ামী লীগ। এর পর বিকল্প স্থান হিসেবে পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কথা বলা হয়। তখন আওয়ামী লীগের ভেতরে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে (কাজী বশির মিলনায়তন) সমাবেশ করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলে। কিন্তু নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনের পরিসর ছোট এবং সমাবেশ হলে রাস্তায় লোক জড়ো হয়ে যানজটের সৃষ্টি করবে—এই চিন্তা থেকে সেটিও বাদ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে রাজনৈতিক সমাবেশ করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপত্তি তোলে। এর পর রাতে আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সমাবেশ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ কোথায় সমাবেশ করবে—এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। যেখানেই সমাবেশ করতে দেওয়া হোক, সেখানেই করতে পারবে। মূল বিষয় হচ্ছে বিএনপি কবে ও কোথায় মহাসমাবেশ করবে? তাঁর মতে, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করার সর্বাত্মক প্রস্তুতির দিকে এগোচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন করতে চায়। পাশাপাশি রাজপথের দখলও ধরে রাখবে আওয়ামী লীগ। ফলে বিএনপিকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, সংঘাত বা সহিংসতায় যেতে নেতা–কর্মীদের নিষেধ করা আছে। বিএনপি নিজে থেকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে এর জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি সরকারি প্রশাসনও তাদের মতো করে বিএনপিকে মোকাবিলা করবে।
বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবারের সমাবেশে লোক আনার জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার সংসদ সদস্যদেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।