সংবিধান বাতিলের প্রয়োজন নেই, আলোচনা করে সংশোধন করা যায়: নুরুল হক
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, ‘বিভিন্ন সময় সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। এটা বাতিলের প্রয়োজন নেই। বরং সবার সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা যায়।’
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে আল রাজী কমপ্লেক্সে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নুরুল হক। গণ অধিকার পরিষদের দুটি অংশ একীভূত হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এতে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় নতুন বাংলাদেশ গঠনে অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
নুরুল বলেন, ‘জাতি একবারই স্বাধীন হয়। ’৭১–এর সঙ্গে ’২৪–এর তুলনা চলে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ও জুলাই আন্দোলনে আহত সবাইকে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে সরকারের নানা দুর্বলতা লক্ষ করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। আওয়ামী হাই কমান্ডের লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, সচিবালয়ে আগুন আমাদের হতাশ করছে।’
ঘোষণাপত্র সর্বজনীন করার উদ্যোগ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করেছেন বলে মন্তব্য করেন নুরুল। তিনি বলেন, ‘আগামীর নতুন বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশকে পেছনে নিয়ে যাবে। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তিতেই দেশ চালাতে হবে।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সব দল, সংগঠন ও অংশীজনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে করতে হবে। কারণ, এই গণ-অভ্যুত্থানের মালিক এ দেশের ১৮ কোটি জনগণ। জনগণকে বাদ দিয়ে এ দেশে আর কোনো রাজনীতি হবে না।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের গেজেটভুক্ত করতে হবে। শেখ হাসিনার সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে বিএনপি-জামায়াত করার কারণে অনেকের গেজেট আটকানো হতো, ঠিক একই কায়দায় এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও আটকানো হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক।’
২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফারুক হাসান বলেন, ‘গণ অধিকার পরিষদ তরুণদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মাঝখানে কিছু মতপার্থক্যের কারণে গণ অধিকার পরিষদ আলাদাভাবে পথ চলতে শুরু করে। কিন্তু ২০২৪ সালের বিপ্লবে উভয়ে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আজকে থেকে গণ অধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গত রোববার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে। ঘোষণাপত্রে ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা ও মুজিববাদী সংবিধান 'কবরস্থ' ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়৷ ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দুই দিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলে। গতকাল সোমবার রাত পৌনে দুইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করার কথা জানায়। এর আগে গত রাত সোয়া ৯টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের জরুরি ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে।