দলীয় প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র বেশি আওয়ামী লীগের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে শেষ পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ জন। গতকাল রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এই হিসাব দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচনে প্রার্থীদের বড় অংশই স্বতন্ত্র। এই সংখ্যা চার শর কাছাকাছি।
এই নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে প্রার্থী আছে ২৭টি দলের। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছে ২৬৩ আসনে। দলটির আরও ২৬৯ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন; যাঁরা ইতিমধ্যে ‘আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে ভোটের মাঠে পরিচিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ জন বর্তমান সংসদ সদস্যও রয়েছেন, যাঁরা এবার দলের মনোনয়ন পাননি। কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের বাইরেও কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মোট স্বতন্ত্র প্রার্থী চার শর কাছাকাছি।
অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাই বা ইসির আপিলে যাঁরা প্রার্থিতা হারিয়েছেন, তাঁরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ভোটের আগে উচ্চ আদালতের রায়ে কেউ প্রার্থিতা ফিরে পেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৮ জন। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৯টি দলের প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৭৩৩ জন। এবার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।
এর আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। এবার আবার বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভোট বর্জনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। অবশ্য এবার যাতে কোনো আসনে কেউ বিনা ভোটে নির্বাচিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ। এ জন্য এবার দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়নি; ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে ৭৩১টি বাতিল হয়। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান ২৮০ জন। আর বাছাইয়ে বৈধ হওয়ার পরও আপিলে বাদ পড়েন ৫ জন। গতকাল ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন সারা দেশে ৩৪৭ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
নির্বাচন কমিশন গতকাল রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে দলভিত্তিক চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দিতে পারেনি। তারা শুধু মোট প্রার্থীর সংখ্যা জানিয়েছে। আজ সোমবার প্রতীক বরাদ্দ।
গত রাতে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এখন মোট বৈধ প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। পাঁচটি মনোনয়ন স্থগিত আছে। তিনি জানান, ২৭টি নিবন্ধিত দলের প্রার্থী রয়েছেন। তবে কোন দলের কতজন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কতজন তার হিসাব আজ সোমবারের আগে দেওয়া সম্ভব হবে না।
অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাই বা ইসির আপিলে যাঁরা প্রার্থিতা হারিয়েছেন, তাঁরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ভোটের আগে উচ্চ আদালতের রায়ে কেউ প্রার্থিতা ফিরে পেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শুরুতে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। বাছাই ও আপিল শেষে তাদের বৈধ প্রার্থী ছিল ২৯৩ জন। সমঝোতার মাধ্যমে ১৪–দলীয় জোটের শরিক এবং বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ৩২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনের দুটিতে আগ থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা প্রতীকের) দেয়নি। বাকি ৩০টি আসনে গতকাল নৌকার প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এখন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছে ২৬৩ আসনে।
এখন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে ২৮৩টি আসনে। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে দেনদরবার করে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটে জাতীয় পার্টি ছিল না। তবে গতকাল আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ আগেই ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল তারা দলগত ও জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। জোটভুক্ত দলগুলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা বা নিজ নিজ দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে। ২৫টি আসনে জোটগত প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জোটগত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ২৫টিসহ মোট ২৬টি আসন জাপাকে ছেড়েছে ক্ষমতাসীনেরা। একটি আসনে (নারায়ণগঞ্জ-৫) আগে থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক জাসদ তিনটি (বগুড়া-৩, কুষ্টিয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৪) আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি (রাজশাহী–২ ও বরিশাল–২) আসনে এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) পিরোজপুর–১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় নির্বাচন করবে। জাসদ জানিয়েছে, মোট ৬৬টি আসনে তাদের প্রার্থী আছে। তাঁদের মধ্যে ৬৩ জন দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে এবং তিনজন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
ইসিতে হঠাৎ নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপির দাবি, সারা দেশে তাদের ১৪০ আসনে প্রার্থী আছে। আর বিএনএম দাবি করেছে, তাদের প্রার্থী আছে ৪০ আসনে। জাকের পার্টি ২১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। গতকাল দুই শতাধিক আসন থেকে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে দলটি নির্বাচনে আছে। ৭–৮টি আসনে তাদের প্রার্থী রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।
নির্বাচন কমিশন গতকাল রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে দলভিত্তিক চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দিতে পারেনি। তারা শুধু মোট প্রার্থীর সংখ্যা জানিয়েছে। আজ সোমবার প্রতীক বরাদ্দ। এর পর থেকে শুরু হবে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার।