গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের তৎপরতাকে দলের গঠনতন্ত্র ও মূলনীতির পরিপন্থী বলে অভিযোগ করেছেন দলের একাংশের নেতারা। তাঁদের দাবি, দলের আহ্বায়ক পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনিই দলের আহ্বায়ক আছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে নেওয়া হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে গণ অধিকার পরিষদের ব্যানারে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা ছাড়া আর কেউ গণ অধিকার পরিষদের হয়ে বক্তব্য দিলে তা অবৈধ। সদস্যসচিব নুরুল হক ও ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহম্মদ রাশেদ খান অব্যাহতিপ্রাপ্ত, তাই তাঁদের বক্তব্য দলীয় বক্তব্য হিসেবে গণ্য হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান। তাতে বলা হয়, সম্প্রতি বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের অভ্যন্তরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং ন্যায়বিচারের চর্চা ব্যাহত হয়েছে। গত ১৮ জুনের পর থেকে নুরুল হক নুরের সব তৎপরতা দলীয় গঠনতন্ত্র ও মূলনীতির পরিপন্থী।
লিখিত বক্তব্যে ১৮ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস ও অপসারণ করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের দুই–তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ১২১ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৮১ জনের সমর্থন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ১ জুলাইয়ের সভায় ৪৫ সদস্য উপস্থিত হন। সভায় সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণের আহ্বান জানালে তা না করে প্রকাশ্যে হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলা হয়। ফলে অনেকেই ভোটদানে বিরত থাকেন।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ১ জুলাইয়ের সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে রেজা কিবরিয়াকে দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক এবং প্রতারণামূলক। রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান, সাদ্দাম হোসাইন, জাকারিয়া পলাশ, যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রহমান, আবুল কালম আজাদ, আবু সাঈদ প্রমুখ।
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হকের মধ্যকার দ্বন্দ্বে দলটিতে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতির ঘটনা ঘটে। নুরুল হক ও তাঁর সমমনারা রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে রাশেদ খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করেছেন। এর পাল্টায় নুরুল হক ও রাশেদকে দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন রেজা কিবরিয়া। একই সঙ্গে যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে দলের নতুন সদস্যসচিব ঘোষণা করেন তিনি।
রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে চিঠি পাঠান নুরুল হকের সমর্থকেরা। গত শনিবার গণ অধিকার পরিষদের দপ্তর সমন্বয়ক শাকিল উজ্জামানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আজ পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরল গণ অধিকার পরিষদের আরেক অংশ।