আওয়ামী লীগের জনসমক্ষে আসার অধিকার নেই: হাসনাত আবদুল্লাহ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণজমায়াতে বক্তব্য দেন সম্বনয়ক সারজিস আলম পাশে ছিলেন আসনাত আব্দুল্লাহ ও অন্যান্য ছাত্র প্রতিনিধিরা। বাইতুল মোকাররমের দক্ষিন গেইট থেকে তোলাছবি : সাজিদ হোসেন

আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর চেয়েও নৃশংস, মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জনসমক্ষে আসার অধিকার নেই।

শহীদ নূর হোসেন দিবসে আজ রোববার দুপুরে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ব্যানারে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনের সড়কে গণজমায়েত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে আওয়ামী লীগকে নিয়ে এ কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। দিবসটি উপলক্ষে আজ দুপুরে নূর হোসেন চত্বরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে দলটির নেতা–কর্মীদের তেমন সমাবেশ দেখা যায়নি। অল্প কয়েকজন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গেলে মারধরের শিকার হয়েছেন।

আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ডাক দিয়ে করা ওই গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে বিচারের জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।’

বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ওই গণজমায়েত চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তি, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও ছাত্রনেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা জুলুম করেছে, তাদের প্রতি কোনো উদারতা নয়। জালেমদের উদারতা দেখিয়ে জেনেভায় গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

বিএনপিসহ বিভিন্ন দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে কারও নাম উল্লেখ না করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কেবল একটা ভোটের জন্য এত শহীদ রক্ত দেননি। গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার কথা কিছু রাজনৈতিক দল বলছে। আগে সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন সংস্কারেরই একটা অংশ।’

দেশের নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংস্কারের পরই নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। বর্তমানে মামলা নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে প্রতারণা করলে তাঁরা আবার দাঁড়িয়ে যাবেন। ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান থাকবে অনড়।’

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। অর্ধলাখ মানুষকে আহত করেছে। হাসিনা প্রতিটি হত্যার হুকুমদাতা।’ শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

পৃথিবীর কাছে খুনি হাসিনার নির্মম হত্যাকাণ্ডের তথ্য পৌঁছে দিতে চান উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, যাঁরা হাসপাতালে এখনো আহত অবস্থায় আছেন, যাঁদের কাছে রক্তাক্ত স্মৃতি রয়েছে, সেই ঘটনাগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। রক্তাক্ত এই দাগগুলো পুরো পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের মানুষ দলমত–নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ। তারা ভেবেছিল, এই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। কিন্তু হাসিনার রক্তখেকো আচরণ মানুষ ভুলে যায়নি। আজকের জমায়েত তারই প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় দিল্লির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার দিন শেষ। আগামীর বাংলাদেশ বিভাজিত হতে দেব না। সবাই এক টেবিলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসিবাদকে আর কখনো পুনরুদ্ধার হতে দেওয়া হবে না।’

লড়াই এখনো শেষ হয়নি বলে উল্লেখ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিভিন্ন স্থানে বসে আছে। প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা শিশুহত্যা, গণহত্যাকে সমর্থন করছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর। তাদের বিচার করতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার হয়নি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ফিলিস্তিনেও এত মানুষ মারা যায়নি। ছাত্রলীগ যদি নিষিদ্ধ হতে পারে, তাহলে তাদের মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহীন সরকার।

আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে আয়োজিত এই সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় রাজাকারদের পদচারণে সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলেম-ওলামা হত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ছায়া স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘হাসিনা ও তাঁর দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিস্টদের ধরিয়ে দিন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিন, আমরা সহযোগিতা করব।’

গণজমায়েত কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোবাশ্বিরুজ্জামান, মাহীন সরকার, আরমান হোসাইন, নুসরাত তাবাসসুম, উমামা ফাতেমা, রিফাত শরীফ, ‘শিশুবক্তা’ মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফুল ইসলাম হাদী, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল হক প্রমুখ।