দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ৫৭% স্বতন্ত্র প্রার্থী
আপিল নিষ্পত্তি শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ৩০০ আসনের মোট চূড়ান্ত প্রার্থীর চিত্র পাওয়া যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইয়ে তাঁদের ৪২৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় ৫৭ শতাংশই বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন।
এবার সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্রসহ মোট ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দিলেও বাছাইয়ে ৭৩০ জন বাদ পড়েন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৪ জন এবং জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অন্তত ৩০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বাছাইয়ে বাদ পড়া বাকিরা অন্যান্য দলের।
মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে এমন প্রার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করা শুরু করেছেন। গতকাল প্রথম দিনে ৪২ জন নিজেদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে আপিল করেছেন। আপিলের মাধ্যমে অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন। আবার বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধেও আপিলের সুযোগ আছে। আপিল নিষ্পত্তি শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ৩০০ আসনের মোট চূড়ান্ত প্রার্থীর চিত্র পাওয়া যাবে। তবে এখন পর্যন্ত বৈধ প্রার্থী ১ হাজার ৯৮৫ জন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ইসিতে আপিল করতে পারেন। যাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে এবং যাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, উভয়ের বিপক্ষে আপিল করা যাবে।
ইসি সচিবালয়ের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বাছাইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে সমর্থনসূচক সইয়ে গরমিলের কারণে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থন-সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তারা দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে কয়েকজনের সই যাচাই করে থাকেন।
এবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার আরেকটি বড় কারণ ঋণখেলাপি হওয়া। এ কারণে এবার বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে অন্তত ১০৫ প্রার্থী। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা বিল খেলাপি হওয়া, যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়া, হলফনামায় সঠিক তথ্য না দেওয়া, আয়কর রিটার্নের কপি না দেওয়া, নতুন ব্যাংক হিসাব না খোলাসহ নানা কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে ৪ জনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাতিল হয়। তবে ঝালকাঠি-১ আসনে শাহজাহান ওমরকে চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র দেওয়ায় এখানে প্রথমে দল মনোনীত বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। সব মিলিয়ে বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন ২৯৪টি আসনে। ক্ষমতাসীনেরা এখনো জোটের সঙ্গে তাদের আসন ভাগাভাগির হিসাব চূড়ান্ত করেনি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে এটি চূড়ান্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে কিছু আসনে দলীয় প্রার্থীর বদলে জোটগত প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। এটি হলে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আরও কমবে।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার মোট ৩০৪ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাছাইয়ে দলটির ৩০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে এখন মোট নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৪৪টি। ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বেশ কিছু দল নির্বাচনে নেই। ইসি জানিয়েছে, এবার ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা আরও কমার সম্ভাবনা আছে।
আপিল চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত
তফসিল অনুযায়ী, বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল বা বৈধতার বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর শুনানির মাধ্যমে আপিল নিষ্পত্তি করবে ইসি। শুনানি চলবে ১০-১৫ ডিসেম্বর। ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে যাওয়ারও সুযোগ পাবেন।
ইসি জানিয়েছে, গতকাল আপিলের প্রথম দিনে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান, পাবনা-২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী ডলি সায়ন্তনীসহ ৪২ জন আপিল করেছেন। আপিল করা ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
গতকাল বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ইসিতে আপিল করতে পারেন। যাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে এবং যাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, উভয়ের বিপক্ষে আপিল করা যাবে।