ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিলুপ্ত হয়ে যায়নি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, গোটা ব্যবস্থার মধ্যে ফ্যাসিবাদ আছে। এখানে গণতন্ত্র নেই, অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এখানে ঘটছে না। প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের শাসন এখনো দূরের স্বপ্ন।
বাসদের আহ্বায়ক আ ফ ম মাহবুবুল হকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে বামপন্থীদের ভূমিকা এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা বলেন। গতকাল রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সভার আয়োজন করে আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদ।
দেশের বামপন্থীদের অবিলম্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা উচিত বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি মনে করেন, সেই যুক্তফ্রন্টের আশু কর্তব্য হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নির্বাচন দিয়ে বিপ্লব ঘটবে না, কিন্তু সরকারের পরিবর্তন ঘটবে। বামপন্থীরা জিতবে না, জিতলেও অল্প আসনে জিতবে। তারা ক্ষমতায় যাবে না। কিন্তু তারা যে এ দেশে আছে, তারা যে বিকল্প শক্তি, যে বিকল্প শক্তি জনগণ দেখতে চায়, সেই শক্তির একটা উত্থান দেখতে পাবে, পরিচয় দেখতে পাবে। বামপন্থীরা এর মধ্য দিয়ে প্রচার করতে পারবে তাদের মতাদর্শ।
কেবল ঢাকা নয়, শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্রই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হবে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যে ছাত্ররা এখন বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছে, যারা পথের সন্ধান পাচ্ছে না, তারা পথের সন্ধান পাবে। এই নির্বাচনের পর আবার যখন নির্বাচন হবে, তখন দেখা যাবে, বামপন্থীরাই প্রধান শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরবর্তী নির্বাচনে বুর্জোয়ারা জিতবে বলে মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, তাদের (বুর্জোয়া) সঙ্গে প্রতিপক্ষ থাকবে ধর্মীয় মৌলবাদীরা। এরা রাজনীতিরই দুটি ধারা। সেই জায়গায় বামপন্থীদের উপস্থিত হওয়া উচিত একটা শক্তি হিসেবে।
‘সরকারের মধ্যে বৈষম্যবাদী রাজনীতির প্রবণতা’
জুলাই-আগস্টে গণ–অভ্যুত্থান ঘটেছে, বিপ্লব হয়নি বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্লোগান গণ–অভ্যুত্থানের মধ্যে আছে। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাদের হাতে ক্ষমতা, তাদের মধ্যে বৈষম্যবাদী রাজনীতি করার প্রবণতা বেশি। ধর্মীয়ভাবে বৈষম্য, জাতিগতভাবে বৈষম্য, শ্রেণিগতভাবে বৈষম্য, লৈঙ্গিক বৈষম্যের রাজনীতি দেখা যাচ্ছে।
যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা সবকিছু নতুন করে সাজাতে চান বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, পুরোপুরি নতুন তো কেউ হতে পারবে না। সেটা করতে গিয়ে একাত্তরকে ছোট করা বা একাত্তর বাদ দেওয়া, এগুলো হচ্ছে খুবই আত্মঘাতী প্রবণতা কিংবা অনৈতিহাসিক প্রবণতা। পরিবর্তন তো হতেই হবে। তার মধ্যে নতুন নতুন উপাদান আসবে। তার অর্থ এটা নয় যে আগেরটা বাতিল হয়ে গেছে।
জনপন্থী রাজনীতির অভাব রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘একই শ্রেণিরই আরেক রকম অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের মতোই কথাবার্তা দেখতে পাচ্ছি কিংবা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীগুলোর কথাও দেখতে পাচ্ছি। এরা সবাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ স্বপ্নের বিরোধী। এরা তো বৈষম্যবাদী রাজনীতি করতে চাচ্ছে। এরা স্বৈরতান্ত্রিক ভাব ও ভাষা নিয়ে এসেছে।’
এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া প্রমুখ।