বিএনপির ৮০ শতাংশ নেতা–কর্মী সরকারের দমন-নির্যাতনের শিকার: মির্জা ফখরুল
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির প্রায় ৮০ শতাংশ ‘সদস্য-কর্মকর্তা’ (নেতা–কর্মী) সরকারের দমনপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ছাত্রদল-যুবদলের নেতা–কর্মীদের নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। কারও পায়ের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে, কারও পা মুচড়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে, কারও হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিগত আন্দোলনে গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব বলেন। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু বিএনপির সদস্য নয়, এমনকি তাদের স্ত্রী, বোন, মা-বাবাকে পর্যন্ত এরা (সরকার) রেহাই দেয়নি।’
সারা দেশে সরকার একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কখন কাকে কীভাবে তুলে নিয়ে যায়, এর নিশ্চয়তা নেই। একটা কথা কবে বলেছে, সেটার জন্য ১০ বছর পরও মামলা হয়। ফেসবুকে কেউ মনের কথা লিখলে বা পোস্ট দিলে সে যেখানেই থাকুক, তাকে ধরে নিয়ে আসে। এমনি করে সারা দেশে এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে মানুষ ভয়ে থাকে, ত্রাসে থাকে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এর থেকে মুক্তি পেতে আমরা সংগ্রাম করছি। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, তার চেয়েও বেশি সংগ্রাম করছি। এখন যেটা প্রয়োজন, জনগণের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা। যারা গণতন্ত্র চায়, একাত্তরে, ঊনসত্তরে, নব্বইয়ে যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে; সেই একইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য হবে আগে নিজেদের সংগঠিত করা, এরপর গোটা জাতিকে আবারও সংগঠিত করা। তারপর বিদ্রোহ, প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এদের পরাজিত করা। কারণ, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ তো একটাই—একে পরাজিত করতে হবে। পরাজিত করতে না পারলে আমরা এর থেকে মুক্তি পাচ্ছি না।’
পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে গুম, খুন ও অঙ্গহানির শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ঈদের উপহারসামগ্রী ও অর্থ তুলে দেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার নিউমার্কেট থানা ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান (নিহত), বংশাল ছাত্রদল নেতা পারভেজ রেজা (গুম), খিলগাঁও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি (নিহত), তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি জাকির হোসেন (গুম), ছাত্রদল নেতা নুরুল ইসলাম, মো. সোহেল, বংশাল থানা ছাত্রদলের চঞ্চল ও পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম (গুম), কাফরুল থানা যুবদলের নুরুল হক ও শামিম মোল্লা (নিহত), সাজেদুল ইসলামসহ (গুম) ২১টি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আমরা বিএনপি পরিবার–এর সভাপতি আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান (শিমুল বিশ্বাস), প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন প্রমুখ।