এখন দল গোছানো ও নিবন্ধনের শর্তপূরণে মনোযোগ এনসিপির
আগামী নির্বাচনে সব আসনেই প্রার্থী দিতে চায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দল গোছানো ও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য শর্তপূরণে মনোযোগ দিয়েছে এর নীতিনির্ধারকেরা। সেই লক্ষ্যে একটি বিশেষ টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের গড়া এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলা, উপজেলা–থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্য রয়েছে দলটির। যদিও ইসির গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দল নিবন্ধনের জন্য ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
এনসিপি কোনো নির্বাচনী জোটে যাবে, নাকি এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে, নিবন্ধনের পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে দলটির উচ্চপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এই সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণের চেষ্টা আছে তাদের। ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলীয় কার্যালয় স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের প্রস্তুতি চলছে। রমজান মাসে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির সম্ভাবনা কম। এমতাবস্থায় নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়াতে ইসির কাছে আবেদন করতে পারে এনসিপি। তবে দল গোছাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ঈদুল ফিতরের পর দল গোছানোর কাজ পুরোদমে শুরু হবে।
এনসিপি কোনো নির্বাচনী জোটে যাবে, নাকি এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে, নিবন্ধনের পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে দলটির উচ্চপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে।
নিবন্ধনের প্রস্তুতির জন্য একটি বিশেষ টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।
আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় দলীয় কার্যালয় থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবেন।
কোনো দল দলীয় প্রতীক নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করতে হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে: ১. স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়; সেসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের ৫ শতাংশ অর্জন এবং ৩. কেন্দ্রীয় কমিটিসহ দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কার্যালয় থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় দলীয় কার্যালয় থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবেন।
পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হয়। যেমন কেন্দ্রীয়সহ দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণ করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিক অথবা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গসংগঠন না থাকা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কিছু শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব হলো, নিবন্ধন পেতে ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলের অফিস এবং দলটির কমপক্ষে পাঁচ হাজার সদস্য থাকতে হবে। যদিও এসব প্রস্তাব এখনো আইন হিসেবে কার্যকর হয়নি। অর্থাৎ নিবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত আগের আইনই বহাল রয়েছে।
আপাতত কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঈদের আগে দলের দ্বিতীয় সাধারণ সভা হতে পারে। সেখানে এসব বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে।
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ১০ মার্চ সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে যাঁরা নিবন্ধিত হতে চান, তাঁরা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে ইসির কাছে আবেদন করতে পারবেন। ইসি সেই আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং নিবন্ধনের জন্য পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, তা সম্পন্ন করবে।
এনসিপির প্রথম সাধারণ সভা হয় গত ৭ মার্চ। সভা শেষে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা এখন দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণ মনোযোগী হচ্ছেন। তৃণমূলে সাংগঠনিক বিস্তার কার্যক্রম রমজান মাসে কিছুটা শুরু করেছেন, রোজার পর এটা পুরোদমে শুরু করা হবে। তার আগে ৪ মার্চ এনসিপির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, চলতি মাসের মধ্যে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ শুরু করা হবে।
তবে বর্তমান প্রক্রিয়ায়ও যদি এনসিপি ঢোকে, সারা দেশে সাড়ে চার শর বেশি নাগরিক কমিটি আছে। এটাকে কেবল কনভার্ট করলেই (দলীয় কমিটতে রূপান্তর) নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। জেলা কার্যালয়, উপজেলা কার্যালয়ের যে শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির
এনসিপির দায়িত্বশীল দুজন নেতা গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কার্যালয় স্থাপনসহ নিবন্ধনের শর্তের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এনসিপির ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন পরামর্শ আসছে। তবে কার্যালয়ের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঈদের আগে দলের দ্বিতীয় সাধারণ সভা হতে পারে। সেখানে এসব বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে।
নিবন্ধনের জন্য এনসিপি কোনো শর্ত রাখার পক্ষে নয় বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তবে বর্তমান প্রক্রিয়ায়ও যদি এনসিপি ঢোকে, সারা দেশে সাড়ে চার শর বেশি নাগরিক কমিটি আছে। এটাকে কেবল কনভার্ট করলেই (দলীয় কমিটতে রূপান্তর) নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। জেলা কার্যালয়, উপজেলা কার্যালয়ের যে শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।’
এনসিপির দায়িত্বশীল আরেকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যাবে। কমিশনের কাছে নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে। মে-জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হতে পারে। পাশাপাশি সংস্কার কমিশনের সুপারিশও তুলে ধরা হবে।