সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়: জামায়াতে ইসলামী

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারছবি: প্রথম আলো

সংস্কার ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করেই জামায়াত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে দলটি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল আজ ইসি সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।

‘নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্মস’ (সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়)—এমন মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত ইসিকে নির্বাচনের কোনো দিন, মাস, ক্ষণ বেঁধে দেয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক।

জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়।

ইসির কাছে জামায়াত ২৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে বলে সাংবাদিকদের জানান দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, তাঁরা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্মস’। পরিপূর্ণভাবে, অন্তত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব অর্গান (প্রতিষ্ঠান) ও বিভাগ রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত, সেগুলো সংস্কার করেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে এ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না, অবাধ হবে না। পূর্বের তিনটি নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিতে পারেনি, সেই নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এ দেশে জনগণ, ২ হাজার ছাত্র-জনতার জীবন, ৩০ হাজার ছাত্র-জনতা যে আহত, এই রক্ত বৃথা যাবে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সংস্কার সম্পূর্ণ করে, নির্বাচনপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু করতে যেটুকু সংস্কার লাগে, আমরা পুরো রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা বলিনি। অনেকে এটা নিয়ে ভুল বোঝার চেষ্টা করেন।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, এটা (রাষ্ট্র সংস্কার) করতে গেলে সময় লাগে, এটা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে গেলে যে সংস্কারটুকু ন্যূনতম প্রয়োজন, তার জন্য যতটুকু সময় যৌক্তিক প্রয়োজন, জামায়াতে ইসলামী সে সময় দিতে প্রস্তুত। আমরা কোনো দিন, মাস, ক্ষণ বেঁধে দিইনি।’

আগামী ডিসেম্বর ধরে ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার একটি ‘টেনটেটিভ আইডিয়া’ (সম্ভাব্য সময় নিয়ে ধারণা) দিয়েছে। তারা যদি ঘোষিত সময়ে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ শেষ করে অবাধ ও নির্বাচন করতে পারে, তাতে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। মাস জামায়াতের কাছে ‘ফ্যাক্টর’ (বিষয়) নয়।

স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ইসিকে তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, জনগণ চায়, স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। তাঁরা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করেন।

জামায়াত ইসিকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, বিশ্বের ৬০টি দেশে এই ব্যবস্থা চালু আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতে ‘পেন্ডিং’ (বিচারাধীন) আছে, শুনানি চলছে। তাঁরা আশা করছেন, আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কোনো প্রয়োজনই নেই। দল হলেই নির্বাচন করবে। ২০০৮ সালের আগে নিবন্ধন আইনই ছিল না। এই আইনে কঠিন শর্ত দিয়ে দল ও রাজনীতি করার অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এ আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তদন্তে জামায়াতের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ তথ্য সঠিক নয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে ‘রেসপন্স’ (সাড়া দেওয়া) করা হয়েছে। এ তথ্যটা কীভাবে এসেছে, তা তাঁরা যাচাই করবেন।

বৈঠকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।