এই বাজেট কল্পনার ফানুস, কর–ঋণনির্ভর ও লুটেরাবান্ধব: বিএনপি
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, শূন্যের ওপর দাঁড়ানো এই বাজেট কল্পনার ফানুস। কর ও ঋণনির্ভর এই বাজেট লুটেরাবান্ধব। আওয়ামী লীগ নিজেদের চুরি হালাল করার জন্য এই বাজেট প্রস্তাব করেছে।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বস্তি নেই। বর্তমান লুটেরা সরকারের এ বাজেট কেবল গুটিকয় অলিগার্কের জন্য। যারা শুধু চুরিই করছে না; তারা ব্যবসা করছে, তারাই নীতি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই দেশ চালাচ্ছে।
বাজেটকে গণমানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সঙ্গে নিষ্ঠুর তামাশা বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অসহনীয় মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে, তার কোনো পথনির্দেশনা নেই। সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কিছু সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে সে আলোচনা নেই।
প্রস্তাবিত বাজেটকে কালোটাকা সাদা করার বাজেট উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ ও বৈধ করদাতারা নিরুৎসাহিত এবং দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতি করার এই লাইসেন্স দেওয়া অবৈধ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। সরকারের আনুকূল্যে বেড়ে ওঠা আজিজ-বেনজীরদের মতো দুর্নীতিবাজদের কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাজেটে ঋণ করে ঋণ পরিশোধের ফন্দি করা হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। সরকার কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণের দিকে আরও ঝুঁকবে। দেশ আটকা পড়বে আরও গভীর ঋণের ফাঁদে। যার বোঝা চাপবে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নবজাতক শিশুকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্ম নিতে হয়।
দেশ দেউলিয়াত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, রিজার্ভ ও ডলার–সংকট বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সংকট। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো রূপরেখা বাজেটে নেই। কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
আওয়ামী লীগের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো উন্নয়নের বেলুন ফুটো হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাজেট শুধু গণবিরোধী না, বাংলাদেশবিরোধী। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প বন্ধ রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু সেটা করলে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, তাই পুরো বাজেট করা হয়েছে মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য।
সরকার বাজেটে জনগণের পকেট কাটার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা কর ফাঁকি দেয়, তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরিকল্পনা না করে, যারা নিয়মিত কর দেয়, তাদের কাছ থেকে বাড়তি আদায়ে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট আওয়ামী লীগ ও তাদের মাফিয়া গুরুদের মধ্যে ভাগাভাগির একটি ইজারাপত্র মাত্র।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ যাবে বেতন-ভাতা, প্রণোদনা, ভর্তুকির মতো অনুৎপাদনশীল খাতে। পুলিশ ও প্রশাসনের একমাত্র কাজ বিরোধী দলকে নির্যাতন করার। তাদের খাতেই বেশি খরচ করা হচ্ছে।
বিএনপির আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রতিটি বাজেটের আগে ভিক্ষার থালি নিয়ে ঘুরতেন—আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের বাজেট দেখেই বোঝা যায় কারা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরছে। পুরো বাজেটই ভিক্ষার, তার মধ্যে নিজস্ব কিছুই নেই। ঘাটতি বাজেট মেটানো হবে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, আরেক দিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ। দেশের মানুষ ইতিমধ্যে খাদে পড়ে গেছে, তাদের ওপর চেপে বসেছে বাজেটের হাতি। তাদের কাছ থেকেই আরও ঋণ নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লা প্রমুখ।