‘সরকারের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকট’ সামনে রেখে মাঠের কর্মসূচি নিচ্ছে বিএনপি
দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকটকে সামনে রেখেই আগামী আন্দোলনের ভিত্তি গড়তে মনোযোগ দিতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ‘সীমাহীন দুর্নীতি এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট’—এই দুটি ‘গ্যাঁড়াকল’ থেকে সরকার সহজে নিস্তার পাবে বলে মনে করছে না বিএনপি। তাই দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকটকে সামনে রেখেই আগামী আন্দোলনের ভিত্তি গড়তে মনোযোগ দিতে চান দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা। সর্বশেষ ৩ জুন অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়ও এ দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরপর খাতভিত্তিক দুর্নীতির খতিয়ান তৈরি করে তা সারা দেশে বিতরণসহ ঢাকায় সভা-সমাবেশ করা হবে। তবে, কোনো কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি। ঈদুল আজহার পর কর্মসূচি মাঠে গড়াতে পারে বলে জানা গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো কর্মসূচি নিইনি। এখন আমরা দুর্নীতির (বর্তমান সরকারের) ওপর কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি। বিষয়গুলো আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরছি, সামনে আন্দোলনের চেষ্টা করব, অর্থাৎ এই সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট নিয়ে জনগণের কাছে যাব।’
বিষয়গুলো আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরছি, সামনে আন্দোলনের চেষ্টা করব, অর্থাৎ এই সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট নিয়ে জনগণের কাছে যাব।
প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ (টিআই) বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা জরিপ ও তথ্যেও সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও বিপুল অর্থ পাচারের ঘটনা প্রকাশ পায়। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব দেশে গণতন্ত্র নেই এবং যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে, সেসব দেশের চেয়েও বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা বেশি। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আসে।
গতকাল ঢাকায় এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ‘প্রশাসনকে এখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনো কারাগার নেই, যেখানে আমাদের কর্মীরা বন্দী নেই। এই আটকও একটি বাণিজ্য। ধরে আনতে পারলে বাণিজ্য, আত্মীয়স্বজনেরা দেখা করতে টাকা, খাবার দিতে টাকা, আদালতে এলে রিমান্ড না নেওয়া জন্য টাকা—এ রকম অনেক খাত আছে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য নয়, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের রক্ষা করাই যেন প্রশাসনের কাজ।’
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দেশের সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সাবেক দুই প্রধানের এ ঘটনা সরকারের ভেতরকার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ‘প্রতীক’ হয়ে ধরা পড়েছে। এবং তাঁদের সম্পদ ও কীর্তিকলাপ এখন মানুষের মুখে মুখে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে দুটি ঘটনাকে বর্তমান সরকারের দুর্নীতি ও নিপীড়নের ‘প্রতিচ্ছবি’ হিসেবে তুলে ধরতে চায় বিএনপি।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী দেশের অন্যতম দুটি মৌলিক প্রতিষ্ঠান। তাঁদের অভিযোগ, এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক দুই প্রধান তাঁদের দায়িত্ব পালনকালে ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার’ ফেরানোর আন্দোলনে সরকারবিরোধী মতের মানুষেরা রাজনৈতিকভাবে নিগৃহীত ও সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে গুম-খুন এবং নির্যাতনে অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন।
সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক থাকতেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে গত ২০ মে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতারা সভা-সমাবেশে দুজনের বিষয়গুলো সামনে আনছেন।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটকে সরকারের ‘নতুন করে লুটের পরিকল্পনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা বলছেন, যারা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, তারা কীভাবে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াবে, কী করে দ্রব্যমূল্য কমাবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সরকারের দুর্নীতির কথা বলতে বলতে আমরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে গেছি। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, তার জন্য দায়ী তো এই দুর্নীতি। যাকে যেখানে বসায়, তারাই চোর।’