শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ছয়টি হত্যা মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘর্ষ-সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ছয়টি হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ১১৯টি হত্যা মামলা হলো।
এর বাইরে হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ১১টি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে তাঁর বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে মামলা হলো ১৩০টি।
সর্বশেষ ছয় হত্যা মামলার অভিযোগ প্রায় একই রকম। এসব অভিযোগের মূল কথা হলো, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি করেন। এতে নিম্নে বর্ণিত ছয় ব্যক্তি মারা যান।
ছয় মামলার মধ্যে আক্কাস আলী নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ১১৫ জনের বিরুদ্ধে বুধবার যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আক্কাস আলী যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ শত শত সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়।
জিহাদ হোসেন (২২) নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে বুধবার শেখ হাসিনা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় আরেকটি মামলা হয়। মামলায় জিহাদের বাবা লিখেছেন, গত ১৯ জুলাই বিকেল চারটার দিকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া পদচারী–সেতুর কাছে গুলি করে জিহাদ হোসেনকে হত্যা করা হয়। মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, আওলাদ হোসেন, মশিউর রহমান সজলকেও আসামি করা হয়েছে।
সাকিব হাসান নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৪২ জনের বিরুদ্ধে গত সোমবার যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগ ও পুলিশ সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। তখন সাকিবসহ কয়েকজন গুরুতর জখম হন। পরে সাকিব মারা যান।
মিরপুরে মুত্তাকিম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে বুধবার আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মুত্তাকিম বিল্লাহর ভাই শিহাবুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বিকেলে মিরপুর-১০–এ কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নেন মুত্তাকিম বিল্লাহ। পরে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। তখন মুত্তাকিম বিল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। পরে ২০ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় হাফেজ সাদিকুল ইসলামকে (২১) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে বুধবার মামলা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের আধুনিক মেডিকেলের পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাফেজ সাদিকুল।
ঢাকার বাইরে ফেনীতে বুধবার আরও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, লে. কর্নেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ১৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে।