তৃতীয়বার ‘প্রতারণার’ শিকার হবে না বিএনপি: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিগত নির্বাচনের আগে সংলাপে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন আবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলোর বিরোধ মেটাতে সংলাপ বা আলোচনার কথা উঠেছে। এমন পটভূমিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অতীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা তো দুইবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। তৃতীয় বার দেশের মানুষ আর প্রতারণার শিকার হবে না।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৮–তে (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) ডেকেছিলেন আলোচনার জন্য, সংলাপের জন্য, আমরা গিয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা অবস্থা তৈরি হয়, সেই অবস্থাতে আমরা যদি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে জনগণের ইচ্ছা–আকাঙ্ক্ষা পরিবর্তন ঘটাতে পারব।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীনেরা সংলাপের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় তাঁদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এসব কথায় কেউ ভুলবে না। কারণ, তোমরা কখনোই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করো না। জাতির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখো না।’
২০১৮ সালের নির্বাচন এবং তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব মন্তব্য করেন, ‘ওই দুটি নির্বাচন মানুষ দেখেছে। আবার ওই জায়গায় ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।’
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে বিধিনিষেধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে প্রতিক্রিয়া হলে আমির হোসেন আমু তাঁর ওই বক্তব্য থেকে সরে আসেন। তবে এরপর আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রী সংলাপ বা আলোচনার প্রশ্নে নানা রকম বক্তব্য দিয়েছেন। যদিও তাঁরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু সংলাপের বিষয়টি আবারও সামনে আসায় বিএনপি মহাসচিবও এ ব্যাপারে বক্তব্য দিলেন।
নির্বাচনের সময় কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না বলে আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গেও বক্তব্য দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, যখন নির্বাচন চলবে, তখন আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, আটক করা যাবে না। এ কথা কে বিশ্বাস করবে? এ তো রাখাল বালকের গল্পের মতো। রাখাল বালক গ্রামবাসীকে বোকা বানানোর জন্য বাঘ আসছে বলে চিৎকার করত। কিন্তু বাঘ আসেনি। তৃতীয়বার যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছিল, তখন রাখাল বালক চিৎকার করলেও গ্রামবাসী আর আসেনি।’
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিএনপির দাবি নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা–মন্ত্রীরা বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন ডেড ইস্যু। ডেড ইস্যু হবে কেন? এটা সবচেয়ে লাইভ ইস্যু। কারণ, আমরা মনে করি, এই সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব তরুণ কুমার দের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা রায়, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, প্রয়াত নেতার ছেলে গৌরব চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে গৌতম চক্রবর্তীর সহধর্মিণী ও ফ্রন্টের উপদেষ্টা দীপালি সাহা চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।