২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ছাত্র–যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেবে: মেজর (অব.) হাফিজ

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের ‘স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন’ কমিটির সভার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ওই কমিটির প্রধান হাফিজ উদ্দিন আহমদছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক পরাশক্তিধরদের চাপে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম। এমন প্রেক্ষাপটের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েলসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ছাত্র-যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘সিটিজেন আর্মিতে’ পরিণত করার উদ্যোগ নেবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের ‘স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন’ কমিটির সভার পর এক সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আজকে একটি জিনিসে আমরা শঙ্কিত যে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে মিয়ানমারে এখন অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম চলছে, যাতে বাইরের শক্তিগুলোও জড়িত। ধীরে ধীরে বাংলাদেশকেও একসময় হয়তো আন্তর্জাতিক শক্তির চাপে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।’

এমন প্রেক্ষাপটে দেশের যুবসমাজকে ‘প্রস্তুত’ থাকার আহ্বান জানান হাফিজ। তিনি বলেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তখন ছাত্র-যুবকদের দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েল এবং অন্যান্য দেশের মতো সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি ‘সিটিজেন আর্মিতে’ পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কখনো বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, সারা দেশের সাধারণ মানুষ যাতে তার প্রতিরোধ করতে পারে, সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি যাতে ছাত্র–যুবকেরাও সংগ্রামে লিপ্ত হতে পারে, সে জন্য বিএনপি উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা কোনো নির্জীব জাতি নই। বাঙালি একটি দুর্ধর্ষ জাতি। একাত্তরে বাঙালি এর প্রমাণ দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমাদের আবার নতুন করে স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিদেশি শক্তির হাত থেকে দেশবাসীকে মুক্ত রাখার জন্য আমাদের হয়তো ভূমিকা রাখতে হতে পারে।’

‘এ পরিস্থিতির জন্য একটি দল দায়ী’

বহির্বিশ্বের বিভিন্ন শক্তি বাংলাদেশকে অধীন করতে চায় বলে অভিযোগ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আজকে যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র কিংবা বহির্বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তি আমাদের তাদের অধীনস্থ করতে চায়। তাদের যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমরা লক্ষ করছি, এটির জন্য একটি রাজনৈতিক দল দায়ী।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার মান ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। ছাত্রদের এখন একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। অবাক কাণ্ড, একজন শিক্ষক পিস্তল দিয়ে ছাত্রকে গুলি করেছে। কোথায় একাত্তরের ছাত্রসমাজ, কোথায় আজকের ছাত্রসমাজ। তাঁর দাবি, ‘এ ধরনের অবনমনের পেছনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা এবং বর্তমান সরকারের ভূমিকা রয়েছে। কেন এ দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, কেন আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারি না। এটি আমরা সবাই উপলব্ধি করি।’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল বক্তব্য হলো আমরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই। ভোটাধিকার ফিরে চাই। ব্যাংক লুটপাটের অবসান চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু মুখে বললে হবে না। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা গণতন্ত্র, সেটির প্রতিফলন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আমরা দেখতে চাই। অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় সামনে অপেক্ষা করছে, ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, আমরা এর অবসান চাই। কারণ, আমরা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছি।’

‘প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধা জন্ম নিচ্ছে’

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার। এখন সেটি আড়াই লাখে উপনীত হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে মুক্তিযোদ্ধা জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিনই। তারা আওয়ামী লীগের সদস্য হলে যথাযথ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা, সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। যাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে জন্ম, তারাও।

জিয়াউর রহমানকে ‘পাকিস্তানের চর’ বলা এবং বিএনপিকে স্বাধীনতাবিরোধী দলের তালিকাভুক্ত করার সরকারি দল অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক আর বিএনপি অসমসাহসী স্বাধীনতার ঘোষকের দল। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পর সাধারণ বাঙালিরা যখন দিগ্‌বিদিকশূন্য হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, সে সময়ে নির্যাতিত বাঙালিদের পক্ষ থেকে মাঠে নেমে এসেছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকেরা। যার নেতৃত্ব দেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের উপ–অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন’ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, বিলকিস জাহান, সৈয়দ এমরান সালেহ, সেলিম ভূঁইয়া, সাখাওয়াত হাসান, মুক্তিযোদ্ধা দলের জয়নাল আবদীন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।