রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শ এবি পার্টির
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ প্রশ্নে ছাত্রনেতাদের সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির নেতারা বলেছেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে বিদায় না করলে তা জাতীয় জীবনের মহাসংকট হিসেবে থাকবে। সে জন্য সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স পাঠিয়ে মতামত নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সরানো উচিত৷
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আজ বৈঠক করে এবি পার্টির সঙ্গে। আজ সোমবার দুপুরে বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে আদালতের মতামত নেওয়ার ওই পরামর্শ দেয় দলটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন এবি পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা। বৈঠক শেষে এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রপতিকেও আমরা অবৈধ মনে করি। যে সংসদ ও মন্ত্রিপরি ষদ অবৈধ, সেই সংসদে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিও অবৈধ; কিন্তু এখানে একটা পরিহাস হচ্ছে, এই রাষ্ট্রপতির অধীনই অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। সেখানে ছাত্র-জনতা ও সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এটা করতে হয়েছে৷’
মজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রে বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের ঝামেলা থাকে, অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া যায় না৷ সে সময় যে একটা বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল, নানা কারণে তখন তা নেওয়া যায়নি। ফলে একটা বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে, অবৈধ রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেওয়াটা বৈধ হয়েছে কি না৷ আমরা মনে করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নিজেই নিজের পূর্ববর্তী বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। সেই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন।’
মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির পদে থাকার কোনো যৌক্তিকতা ও বৈধতা নেই বলে উল্লেখ করেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রপতিকে যদি আমরা বিদায় না করি বা তিনি যদি পদত্যাগ না করেন, এটা আমাদের জাতীয় জীবনের মহাসংকট হিসেবে থাকবে৷ এই বিতর্ক বারবার আমাদের কাছে ফিরে আসবে৷ রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে বা না থাকলে সাংবিধানিক শূন্যতা দেখা দেবে কি না, এই প্রশ্নটা উঠেছে৷ এটা একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তুলতেই পারে বা আমাদের মনে আসতেই পারে৷ সে জন্য আজকের আলোচনায় আমরা স্পষ্ট বলেছি, সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটা রেফারেন্স চাওয়া যেতে পারে৷
এবি পার্টির সদস্য সচিব আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টামণ্ডলী সুপ্রিম কোর্টে একটা রেফারেন্স পাঠিয়ে তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে শপথ নিয়েছেন। এটা কিন্তু একটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের যে বিধানমতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে সে রকম একটা রেফারেন্স নিয়ে একটা সমাধানে আসা যেতে পারে৷ তাহলে সাংবিধানিক সংকট বা শূন্যতা থাকবে না বলেই আমরা মনে করছি৷’
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পক্ষ থেকে আরিফ সোহেল বলেন, এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপে হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা হয়েছে৷ রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে এবি পার্টি আমাদের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়েছেন৷ এ ছাড়াও আমরা সংবিধান ও প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক নিয়ে আলোচনা করেছি৷
আরিফ সোহেল এ–ও বলেন, ‘একটি প্রক্লেমেশন বা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণ–অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে এবি পার্টি একমত পোষণ করেছে৷ আওয়ামী লীগের অধীন গত তিনটি নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার বিষয়েও এবি পার্টি একমত হয়েছে৷ তাদের সঙ্গে আমরা বেশ কিছু জায়গায় ঐকমত্যে আসতে পেরেছি৷’
পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে এর আগে গত চার দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ এ বিষয়ে আরিফ সোহেল বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোতে আমরা নীতিগতভাবে একমত৷ বর্তমানে শুধু প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে৷ বিএনপির সঙ্গে আমরা মুখোমুখি অবস্থান আছি, এটা পুরোপুরি সত্য নয়৷ আমাদের আলোচনাটি জটিল এবং কয়েকটি ধাপে আলোচনা করতে হবে৷ বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদে থাকার যোগ্যতা নেই, সে বিষয়ে সবাই একমত৷ যে বিষয়টি নিয়ে আমাদের পরবর্তী ধাপে আলোচনা করতে হবে, সেটি হচ্ছে প্রক্রিয়া৷’
বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবি পার্টি ছয়টি বিষয় উল্লেখ করেছে৷ এগুলো হলো রাষ্ট্রপতির অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে অহেতুক বিতর্ক বা বিভেদে না জড়িয়ে এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া যেতে পারে; অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সরকার নাকি বিপ্লবী সরকার—এ বিতর্ক অবসানের জন্য একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো দরকার; সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র অধ্যাদেশের মাধ্যমে জারি করা যেতে পারে; সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পুনর্লিখনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা উচিত। একই সঙ্গে এবি পার্টি বলেছে, বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারকে ‘জাতীয় ঐকমত্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ হিসেবে পুনর্গঠন করা উচিত৷
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বৈঠকে অংশ নেন৷
এবি পার্টির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, জ্যেষ্ঠ সহকারী সদস্যসচিব এ বি এম খালিদ হাসানসহ কয়েকজন নেতা৷