সিটি ভোট বর্জন, আন্দোলন, দুটোতেই জোর বিএনপির
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলটির লক্ষ্য পাঁচ সিটি নির্বাচনবিমুখ করে নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে সক্রিয় করার পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জাগিয়ে তোলা।
পাঁচ সিটির নির্বাচন বর্জন এবং জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার হটানোর আন্দোলন—দুটি বিষয় মাথায় রেখেই নতুন করে কর্মসূচিতে নেমেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দুটি বিষয়কেই দলটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
ঈদের পর গত সপ্তাহ থেকে আবার মাঠের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। ১৩ মে দলটি রাজধানী ঢাকায় বড় সমাবেশ করে। সেখান থেকে ঢাকাসহ সব মহানগর এবং দলের ৮১টি সাংগঠনিক জেলায় চার দিনের কর্মসূচি দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ঢাকা মহানগর বিএনপিও (উত্তর ও দক্ষিণ) পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। তারা রাজধানীতে চারটি পদযাত্রা ও চারটি জনসমাবেশ করবে। চলতি মে মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত এই কর্মসূচিগুলো চলবে। একই সঙ্গে অন্য মহানগর ও জেলায়ও জনসমাবেশ হবে। ঢাকার বাইরের চার দিনের এই কর্মসূচিতে দলের জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। কোন নেতা কোন মহানগর বা জেলার কর্মসূচিতে থাকবেন, তার তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
যে সংকট সামনে, এই সংকটের ফয়সালা করতে হলে রাজপথেই করতে হবে। অতএব আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে এই সরকারকে বিদায় করব—এটাই আমাদের শপথ।
বিএনপির নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন, এমন চারজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি কতটা এককাট্টা থাকবে বা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এর কিছুটা পূর্বাভাস মিলবে চলতি মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠেয় পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সিটি নির্বাচনে নেতা-কর্মীদের নিবৃত্ত করা না গেলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় দলের ওপর এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন সরকারি মহলের নানা লোভ ও টোপের মুখে জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলন এবং নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না। এদের (বর্তমান সরকার) অধীন নির্বাচন করার অর্থ হচ্ছে এদের আরও বৈধতা দেওয়া। যেখানে এই অবৈধ সরকার থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে আন্দোলন করছেন, গ্রেপ্তার-হয়রানির শিকার হচ্ছেন, সেখানে নির্বাচনে গিয়ে যারা হালুয়া-রুটির ভাগ নেবে, তাদের সঙ্গে নিয়ে তো আন্দোলন হতে পারে না; বরং সময় এসেছে এদের চিহ্নিত করে রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার।’
জাতীয় নির্বাচনের মাস ছয় আগে পাঁচ সিটির নির্বাচন হচ্ছে। এই সময়ে বর্তমান সরকারের অধীন এবং নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ সিটির নির্বাচনে গেলে সরকার হটানোর আন্দোলনের কোনো আবেদন থাকবে না বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন।
বিএনপি অনেক দিন ধরে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন করছে। গত ডিসেম্বরে এসে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। দলটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে যাবে না।
অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্য থেকে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েই গত ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছে। এর আগে ২০২১ সাল থেকে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন বর্জন করে আসছে দলটি। এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে বিএনপি কেবল সিটির ভোট বর্জন করেই থেমে থাকছে না, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ার দায়ে বহিষ্কারের পাশাপাশি জনগণকেও ভোটে অংশগ্রহণ না করারও আহ্বান জানিয়েছে।
বিএনপি অনেক দিন ধরে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন করছে। গত ডিসেম্বরে এসে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। দলটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে যাবে না। এমনকি ১৩ মে ঢাকায় নয়াপল্টনের সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে নির্বাচন রুখে দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে পাঁচ সিটির নির্বাচন বর্জন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি কর্মসূচিতে নেমেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে ঢাকায় দুটি পদযাত্রা হয়েছে।
গতকাল ঢাকার উত্তর বাড্ডায় পদযাত্রায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেখানে পদযাত্রার আগে সমাবেশে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণ-অভ্যুত্থান’ সৃষ্টি করতে নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে সংকট সামনে, এই সংকটের ফয়সালা করতে হলে রাজপথেই করতে হবে। অতএব আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে এই সরকারকে বিদায় করব—এটাই আমাদের শপথ।’
দলটির নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকে বিএনপি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিতে চাইছে। সে কারণে তাঁরা এখন সিটি ভোট বর্জন এবং মাঠের কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।