প্রথম আলো: আপনি তো বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে আপনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কেন বিএনপি ছেড়েছেন?
সমশের মবিন: আমার বিএনপির সঙ্গে কোনো কোনো জায়গায় বেশি দ্বিমত হয়েছিল। কারণ, আমি বিএনপিকে বলেছিলাম, আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা ম্যানেজ করা প্রয়োজন। বিএনপি যেন ভারতবিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত না হয়। একটি বিষয় তৈরি হয়েছিল যে বিএনপি মানেই ভারতবিরোধী। বিশেষ করে জামায়াত সঙ্গে থাকায় এটি আরও বেশি প্রকাশ পেয়েছে। তো এখানে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করার। এবং আমি বিএনপি থেকে দেওয়া সে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আপনারা দেখলেন যে ২০১৩ সালে যখন খালেদা জিয়া ভারত সফর করলেন, তখন ভারত সরকার তাঁকে একেবারে সরকারপ্রধানের সমমর্যাদা দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। তখন খালেদা জিয়া কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন।
প্রথম আলো: প্রতিশ্রুতি কী দেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রশ্ন কেন এসেছিল?
সমশের মবিন: ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয় ছিল। সে জন্য ২০১৩ সালে ভারত সফরের সময় খালেদা জিয়া সেখানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতির একটা ছিল, বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিএনপি কারও দ্বারা প্রভাবিত হবে না। এ ব্যাপারে বিশেষ করে জামায়াতের কথা বলা হয়েছিল। এ ছাড়া ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যেন বাংলাদেশে কোনো প্রশ্রয় না পায়, সে ধরনের পদক্ষেপ বিএনপি নেবে।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি (প্রয়াত), এই তিনজনকেই ওই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং এভাবে আলাপ–আলোচনা হয়েছিল। তখন প্রণব মুখার্জি এটাও বলেছিলেন যে ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া), আমরা তো আপনার সঙ্গে অতীতে কাজ করেছি, আগামীতেও কাজ করতে পারব।’ প্রণব মুখার্জির মতো লোকের এই কথায় কিন্তু অনেক ইঙ্গিত ছিল। তারপর যখন প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঢাকা সফরে এলেন, বিএনপি প্রধানের সঙ্গে ওনার একটা সাক্ষাৎ ঠিক করা হয়েছিল। সেই সাক্ষাতের দিনের আগের রাতে উনি (খালেদা জিয়া) ঠিক করলেন যে উনি সাক্ষাৎ করতে যাবেন না। কারণ, ওই দিন জামায়াত হরতাল ডেকেছিল। তো উনি (খালেদা জিয়া) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন। যেটা ভারত ভালোভাবে নেয়নি। তখন আমি বলেছি যে আমাকে অপমান করা হলো। কারণ, বিএনপি থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের। ফলে আমার নীতির বিরুদ্ধে তিনি (খালেদা জিয়া) সিদ্ধান্ত নিলেন। তখন থেকে বিএনপির সঙ্গে আমার দূরত্ব শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে আমি বিএনপি থেকে সরে যাই।
প্রথম আলো: এখন আপনার নতুন দল তৃণমূল বিএনপি আসলে কিংস পার্টি কি না? কারণ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের এক দফা আন্দোলনের মুখে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকার কিছু কিংস পার্টি গঠন করছে, এমন আলোচনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোনো একটি পক্ষ কি আপনাদের তৃণমূল বিএনপির মাধ্যমে মাঠে নামিয়েছে?
সমশের মবিন: দেখেন, বাংলাদেশে সর্বশেষ কিংস পার্টি হয়েছিল ড. ইউনূসের অধীনে ‘জনতা শক্তি’ নামের একটি দল। তার পরে কিংস পার্টি হওয়ার সুযোগ আর বাংলাদেশে হয়নি। আমরা মোটেও কিংস পার্টি নই। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বা ভুল একটি ধারণা যে কারও ছত্রচ্ছায়ায় বা কারও সাহায্য নিয়ে আমরা দল করেছি। আমরা সম্পূর্ণ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।
প্রথম আলো: নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপিসহ নতুন দলগুলোতে বিএনপি বা সরকারবিরোধী দলগুলো থেকে আরও লোক টানা হতে পারে। এমন আলোচনাও আছে। সে ধরনের কিছু কি হচ্ছে?
সমশের মবিন: বাজারে আলোচনা আছে; কিন্তু আমরা বিএনপি থেকে লোক খুঁজছি না। আমরা খুঁজছি তরুণসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে এবং যাঁরা নির্বাচন করতে চান। তবে আমাদের নীতি–আদর্শের সঙ্গে মিলতে হবে। জনগণ কিন্তু একটি নতুনত্ব দেখতে চায়।
প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সমশের মবিন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।