হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি, পদে নেই মামুনুল
হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশের ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ২১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসায় তিনি এ অনুমোদন দেন। তবে কমিটিতে নেই হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
মামুনুল হক বর্তমান কারাবন্দী। তবে হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন, তিনি সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়া কমিটিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি।
হেফাজত নেতারা জানান, বিলুপ্ত কমিটির বেশির ভাগকেই নতুন কমিটিতে আগের পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদটি রদবদল হয়েছে। মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে কমিটি বিলুপ্ত করে মাওলানা মীর ইদ্রিসকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। নতুন কমিটিতে মীর ইদ্রিসকে ওই পদ থেকে সরিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়। পাশাপাশি মাওলানা আজিজুল হককেও যুগ্ম মহাসচিব করা হয়। আর সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি বশির উল্লাহকে।
হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রিস আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি খসড়া কমিটির তালিকা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন করেন।
কমিটিতে বাদ পড়ারা আগের পদে পুনর্বহাল হয়েছেন, কিন্তু কারাবন্দী মামুনুল হককে কোনো পদে কেন রাখা হয়নি, জানতে চাইলে মাওলানা মীর ইদ্রিস বলেন, মামুনুল হককে সদস্য হিসেবে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তিনিসহ চারজন কারাগারে রয়েছেন। তাঁরা মুক্তি পেলে মুরব্বিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের পদে রাখতে পারেন।
হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলের চাপেই বিলুপ্ত কমিটির সদস্যদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে হেফাজতে ইসলাম।
২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলে। এর প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল রাতে এক ভিডিও বার্তায় সংগঠনের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। অবশ্য তিন ঘণ্টা পর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন হেফাজতের কমিটিতে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট কাউকে না রাখার জন্য চাপ ছিল। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার দেড় মাসের মাথায় ৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির পদে বহাল রেখে ৩৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট জুনায়েদ বাবুনগরী মারা যান। নতুন আমির হন আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এরপর কমিটিতে আরও ২৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হেফাজতের কেন্দ্রীয় ওই কমিটি ৬২ সদস্যের।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন শাহ আহমদ শফী। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর সংগঠনটির একাংশের সঙ্গে বিরোধের মধ্যে সে বছরের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী এবং তাঁর অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি। পরে বাবুনগরীর কমিটিতে আরও ৫০ জনকে যুক্ত করে ২০১ সদস্যের করা হয়।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি মাদ্রাসায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বাদ পড়া ব্যক্তিদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়।