পরপর দুই ঘটনায় কিছুটা থমকে গেছে জাপা
আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছেন জি এম কাদের। আগামীকাল শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত।
পরপর দুটি ঘটনায় কিছুটা থমকে গেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর একটি জাপার সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা। অন্যটি হচ্ছে তাঁকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা করতে জাপার সংসদীয় দলের প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে স্পিকারের কার্যালয়ে ঝুলে থাকা।
জাপার দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, পরপর দুটি ঘটনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা থমকে গেছেন। বিশেষ করে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলীয় প্রধানের ওপর আদালত এমন কঠিন সিদ্ধান্ত বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেবেন, তা শীর্ষ নেতৃত্ব ভাবতে পারেননি। এর পেছনে অন্য কিছু আছে কি না, থাকলে সেটি কী হতে পারে—এমন আলোচনা এখন নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে।
গত ৩১ অক্টোবর জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক। এ ঘটনার পর থেকে জি এম কাদের এক সপ্তাহ ধরে চুপচাপ রয়েছেন। তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। তাঁর ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা না ওঠা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। গতকাল মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ওই আদালতে আবেদন করেছেন জি এম কাদের। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আবেদনের ওপর শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত।
জি এম কাদেরের আইনজীবী আবদুর রশিদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বিবাদী জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। হয়রানি ও সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইনগতভাবে এই মামলা চলতে পারে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে এই মামলা খারিজ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই আদালতে দায়ের করা পৃথক আরেকটি মামলায় গতকাল জি এম কাদেরকে কারণ দর্শাতে বলেছেন যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক। এ মামলাতেও দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে তাঁকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় আপত্তি দাখিল করার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন জি এম কাদের। আগামী ২ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান (রাঙ্গা) গত ২৩ অক্টোবর মামলাটি করেন। তাঁকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন জি এম কাদের।
যে মামলায় জি এম কাদেরের ওপর আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, এ মামলার বাদীও জাপার সাবেক নেতা জিয়াউল হক। তাঁকেও গত ১৭ সেপ্টেম্বর দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দুটি মামলাতেই জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে আবেদন করেন জাপা থেকে বাদ পড়া সাবেক দুই নেতা। আবেদনে তাঁরা দল থেকে নিজেদের বহিষ্কারাদেশ বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-এর উপধারা ১(১) অবৈধ ঘোষণা চেয়েছেন।
জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলের চেয়ারম্যানের ওপর আদালতের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা চলে না। এটা নজিরবিহীন। আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি, পরবর্তী ধার্য তারিখে তা বাতিল হবে। তা না হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
এ দিকে কাজী নাফিজ মাহফুজ নামে জাপা থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা (কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য) গত সোমবার ঢাকার দ্বিতীয় সহকারী জজ আদালতে জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি গতকাল খারিজ করে দিয়েছেন।
ঝুলে আছে সংসদীয় দলের প্রস্তাব
রওশন এরশাদের পরিবর্তে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে জাপার সংসদীয় দলের প্রস্তাবটি এখনো স্পিকারের কার্যালয়ে ঝুলে আছে। এতে জাপায় অস্বস্তি বিরাজ করছে। গত ১ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছিল জাপার সংসদীয় দল। এটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত সংসদে না যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু পরদিনই জাপা সংসদে যোগ দেয়। তখন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর আশ্বাসে তাঁরা সংসদে যোগ দিয়েছেন। ৬ নভেম্বর সংসদের অধিবেশন শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্পিকার বলেছেন, সংসদের আগামী অধিবেশনের আগে এ বিষয়ে ফয়সালা হবে।