আওয়ামী লীগ সরকার টাকা পাচারকারীদের সহযোগী: গণতন্ত্র মঞ্চ
বর্তমান সরকার টাকা পাচারকারীদের পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগী বলে অভিযোগ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তাঁরা বলেন, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সরকার দেশকে ‘লুটেরাদের রাজ্যে’ পরিণত করেছে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে গ্রেপ্তার হওয়া ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইউসুফ সেলিমসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি থেকে পুলিশ আবু ইউসুফকে আটক করে। পরে মামলা দিয়ে আবু ইউসুফকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগের খাতিরের ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন বলে দাবি করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘দুই কোটি টাকার জন্য খালেদা জিয়ার ১০ বছর সাজা দিলেন, ১ হাজার কোটি ডলার পাচারের জন্য কত সাজা হওয়া প্রয়োজন? জনগণকে শোষণ করে এই রাষ্ট্র এখন ধনী ও লুটেরাদের।’
গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সে দেশের মানুষের ইচ্ছানুসারেই হবে। এর আগে গত ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বাম শরিকের শীর্ষ নেতারা চীন যান। সপ্তাহব্যাপী সফরে এই বামপন্থী নেতারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন।
ভারত ও চীনের এ প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন পুলিশকে হুঁশিয়ার করেছে। ভারত বলে দিয়েছে, দেশের মানুষের ইচ্ছানুসারে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের শরিক বাম নেতারা চীনে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। একে একে এই সরকারের সব দেউটি (বাতি) নিভে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের গলা শুকিয়ে গেছে। ছবিতেও তাদের বিষণ্ন লাগে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে লুটেরাদের রাজ্যে পরিণত করেছে বলে দাবি করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রব। সমাবেশের সভাপতির বক্তব্য তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নাই, ডলার নাই। টাকা পাচারকারীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে, তা পাগল ব্যক্তিও বিশ্বাস করে না।’
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির দিন পুলিশের নাকের ডগায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী অস্ত্রের মহড়া দিল, কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো না। এক দেশে দুই আইন চলছে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের জন্য আলাদা আইন। ২৯ জুলাই বিরোধীদের ‘ড্রেস রিহার্সেল’ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আসল চেহারা দেখিয়েছে।
সরকারের ভাই–ব্রাদার, আত্মীয়স্বজন মিলে লাখো কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, এই লুটপাটের ভাগ পুলিশ–প্রশাসন পায়। কিছু লোকের পকেট ভরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায়। ক্ষমতায় থাকতে কে কার পা ধরছে, তা জনগণ দেখছে।
বাসে আগুনের কথা বলে আর জনগণকে ভোলানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের লোকজন দিয়ে বাসে আগুন দিয়েছে। পুলিশের ছায়াতলে থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন তাণ্ডব চালিয়েছে। পুলিশ এখন ‘পুলিশ লীগ’, এটা স্পষ্ট। কীভাবে ভোট কেটে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখবে, তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন সভা করছে বলে তিনি দাবি করেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।