পরাজয় কার হলো: কাদের
নয়াপল্টন ছেড়ে গোলাপবাগে সমাবেশে রাজি হয়ে বিএনপির অর্ধেক পরাজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
‘নয়াপল্টনে সমাবেশ আমরা করবই, এ কথা যারা বলেছে, তারা এখন গোলাপবাগে’—এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পরাজয় কার হলো, আমাদের নাকি বিএনপির। অর্ধেক পরাজয় হয়ে গেছে। তারা পল্টনে সমাবেশ করতে পারেনি।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ রাস্তায় বের হয়েই বুঝতে পারলাম আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। শেখ হাসিনার কর্মীরা আজ প্রস্তুত। রাতে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া আর আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের খেলা হবে কাতারে। আর বাংলাদেশে খেলা হবে অপশক্তির বিরুদ্ধে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, দুঃশাসন ও আগুন–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। সব অপশক্তি বনাম আওয়ামী লীগ এই খেলা হচ্ছে রাজনীতির মাঠে।
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেক ছাড় দিয়েছি। আর ছাড় দেব না। লাঠি নিয়ে এলে, আগুন নিয়ে এলে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। পুলিশের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা সত্যটা তুলে ধরুন। কিছু মিডিয়া বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা কারা, চেনেন। চিনে রাখুন। সময়মতো তারা জবাব পাবেন। কোনো কোনো মিডিয়া রাতে এবং সকালে যখন দেখি, মনে হয় না এখানে আর কোনো দল আছে।
বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুদের বলি, আমরা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। এখানে দূতাবাসে যাঁরা আছেন, তাঁরা এখানে কারও পক্ষ নেবেন না। আমাদের ঘরের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না। আমরা জানি কীভাবে আমাদের গণতন্ত্র সংরক্ষণ করব।’
কাল এই শহর বিএনপির
ওবায়দুল কাদের বলেন, দুদিন আগে বলিনি মেঘ কেটে যাবে। দুদিন আগে বলিনি বিএনপি শেষ পর্যন্ত সমাধানে আসবে। পল্টন (নয়াপল্টন) থেকে বলেছিলাম বাঙলা কলেজ (মিরপুর বাঙলা কলেজ) না হলে গোলাপবাগ। অবশেষে মেনে নিয়েছে। শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে।
তারা (বিএনপি) কাল থাকবে গোলাপবাগে। আতঙ্কিত কেন হবেন। জনগণকে বলব আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আমরা চলে যাচ্ছি কাল সাভারে। ঢাকায় আমরা নেই। আমরা সাভারে যাচ্ছি। কাল বিএনপিকে এই শহর দিয়ে গেলাম। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন অশান্তি চাইব। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন বিশৃঙ্খলা করব। নির্বাচনের আরও এক বছর বাকি।
এমন বক্তব্যের পর অবশ্য দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী ১০ তারিখ সতর্ক পাহারা। ঠিক আছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও কামরুল ইসলাম, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।
সমাবেশ ছাপিয়ে রাস্তায়
মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিস্তানের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এতে এসব পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহানগর নাট্যমঞ্চের উত্তর পাশে দুই দিকের সড়ক, পূর্ব দিকের দুই দিকের সড়ক এবং পশ্চিম দিকের সড়কে ব্যানার–ফেস্টুন হাতে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করেছেন। গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। সড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ার কারণে বিকেল সোয়া চারটার দিকে সায়েদাবাদ থেকে আসা কয়েকটি বাসকে সড়কের এক পাশ হয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। তবে নেতা-কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে বাসগুলো বেশ ধীরগতিতে এগোয়।
এর আগে বেলা দুইটা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। বিকেল চারটা পর্যন্ত মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।