বিএনপির মঞ্চে উপস্থিতি অনেক হয়, ওটাও আমাদেরই: মান্না
সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, গণতন্ত্র মঞ্চের কর্মসূচিতে উপস্থিতি কিছু কম হলেও বিএনপির মঞ্চে অনেক হয়। সেটাও তাঁদের বলেই মনে করেন তাঁরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান এ কথা বলেন।
প্রশ্ন ছিল, গণতন্ত্র মঞ্চের সাতটি দল যখন আলাদা কর্মসূচি করে, তখন অনেক উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু জোটের কর্মসূচিতে উপস্থিতি কম হয় কেন?
জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এক দিনের কোনো একটা সাময়িক ব্যর্থতা সবাই মিলে অনেক বড় করে দিয়েছেন। কিন্তু সব শেষের যে কর্মসূচি (২৫ জানুয়ারি) গণতন্ত্র মঞ্চ প্রেসক্লাবে করেছে, দ্যাট ওয়াজ আ সাকসেসফুল প্রোগ্রাম। অনেক ভালো হয়েছে। সেই রকম কাভারেজ আপনারা দেননি। এটুকু আপনাদের বলতে পারি, গণতন্ত্র মঞ্চের যে সাতটা দল আছে, সাতটি দলই আন্দোলনের ব্যাপারে আন্তরিক এবং পরিশ্রম করছে।’
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘তবে আমরা ভাগাভাগি বা প্রতিযোগিতা করছি না। আমরা যদি দেখি, আমাদের কিছু কম হলো, কিন্তু বিএনপির মঞ্চে অনেক হয়েছে, ওটাও আমাদেরই মনে করি। কারণ, আমরা একসঙ্গেই আন্দোলন করছি। সেই অর্থে যদি দেখেন, তাহলে সামগ্রিক অর্থেই জনসম্পৃক্ততা অনেক বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল সোয়া চারটায় দলটির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক শুরু হয়। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। বিএনপির পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে সমন্বয়কারী মাহমুদুর রহমান মান্না কথা বলেন।
‘আমাদের মাথা ঘামানো একটাই’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পতনের লক্ষ্যে আমরা যে গণ–আন্দোলন শুরু করেছি, সেটি সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্বের কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনা করেছি এবং পরবর্তী কী কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি অতি দ্রুত অন্যান্য দল ও জোটগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করে ৪ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি সফল করার।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আরও বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা যেন সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, সেই ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’
গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে অনৈক্যের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার এবং সরকারি এজেন্ট স্বাভাবিকভাবে বিরোধী দলের যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাকে দমন করার জন্য, নস্যাৎ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল-অপকৌশল অবলম্বন করবে। ...এগুলো নিয়ে আমরা কিন্তু খুব বেশি মাথা ঘামাই না। আমাদের মাথা ঘামানো একটাই, সেটা হচ্ছে জনগণকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে, আরও সম্পৃক্ত করে এই ভয়াবহ দানবকে সরানো। এর বাইরে আমাদের আর কোনো চিন্তা নেই।’
‘মূল স্পিরিট ঐক্যটাকে আরও দৃঢ় করা’
বিএনপি মহাসচিবের পর কথা বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আন্দোলনের মধ্যেই আছি। চারটি যুগপৎ কর্মসূচি করেছি। এ কর্মসূচিকে আমরা আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই এবং সেটাকে ধীরে ধীরে বিজয়ের জায়গায় পৌঁছাতে চাই। কী রকম করে এটা করা যেতে পারে, তার ওপর আমরা নীতিগত ও কৌশলগত বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা স্থির করেছি, আমাদের সঙ্গে যেসব সহযোগী সংগঠন আছে, অন্যান্য সামাজিক সংগঠন আছে, যেমন ছাত্রসংগঠন, নারী সংগঠন, যুব সংগঠন—তাদের সবাইকে নিয়ে যাতে আন্দোলনে যাওয়া যায়, সে ব্যাপারে একটা উদ্যোগের কথা বলেছি। মূল স্পিরিটটা হচ্ছে ঐক্যটাকে আরও দৃঢ় করা।’
এ ছাড়া জোটের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানো, বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য শত্রুপক্ষ বিভিন্ন রকম কাজ করে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান মাহমুদুর রহমান।
বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে ছিলেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম। বিএনপির পক্ষে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।