বিজয় দিবস পরিণত হয়েছে পরাজয় দিবসে, অভিযোগ মঈন খানের

বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা করে বিএনপি। ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বরছবি: সাজিদ হোসেন

আজকের বিজয় দিবসকে বর্তমান সরকার মৌলিকভাবে বাংলাদেশের পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। এমন মন্তব্যের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় হয়েছিল গণতন্ত্রের। সেই গণতন্ত্রকে তারা (বর্তমান সরকার) হত্যা করেছে। পাকিস্তানের লুটেরা ২২ পরিবারের পরিবর্তে আজ ২২০টি ধনী পরিবার দিয়ে একটি অলিগার্কি শ্রেণি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সব সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এখন টাকাপয়সা আদান–প্রদান করে, সিট ভাগাভাগি করে তারা একটি ভুয়া সংসদ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এ কথাগুলো বলেন। শোভাযাত্রায় মঈন খান প্রধান অতিথি ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের মহাসমাবেশ হামলা, সংঘাতে পণ্ড হওয়ার ঘটনার ৪৯ দিন পর এই প্রথম নয়াপল্টনে জমায়েত করল বিএনপি। কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বেলা দুইটার পর নয়াপল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শান্তিনগরে গিয়ে শেষ হয়। তবে নয়াপল্টনে দলটির কার্যালয়ে ৪৯ দিন ধরেই তালা ঝুলছে।

শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, ‘পাকিস্তানের ২২ পরিবার, যারা শুধু পশ্চিম পাকিস্তান নয়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকেও কুক্ষিগত করে একটি লুটপাটের দেশে পরিণত করেছিল। আমরা চেয়েছিলাম, সেই ২২–এর পরিবর্তে এমন একটি স্বাধীন দেশ হবে, যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি হবে। আজকের আওয়ামী লীগ সরকার ২২ পরিবারের পরিবর্তে ২২০টি ধনী পরিবার দিয়ে একটি অলিগার্কি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এভাবে তারা বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে।’

সরকারের সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, যারা এই সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে, রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লুণ্ঠন করেছে। কাউকে না পেলে তার ভাই, চাচা, বাবা-সন্তানকে ধরে নিয়ে এসেছে। তারা বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে এভাবে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। এ সরকার এই লজ্জা ও কলঙ্ক কোথায় ঢাকবে।

সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মঈন খান বলেন, ‘তারা নাকি উন্নয়ন করে এই দেশকে জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছে। যদি জোয়ারে ভাসিয়ে থাকে, আজকে ক্ষমতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে আসুন। জনগণ তাদের ইচ্ছেমতো যাকে খুশি তাকে ভোট দিক। দেখা যাবে এই সত্যিকারের নির্বাচনে কে জেতে কে হারে।’
আওয়ামী লীগ সরকার প্রহসনের নির্বাচনী খেলা খেলছে বলে অভিযোগ করেন মঈন খান। তিনি বলেন, টাকাপয়সা আদান–প্রদান, সিটের আদান–প্রদান করে, যেভাবে সিট ভাগাভাগি করে তারা একটি ভুয়া সংসদ নির্বাচন করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো নির্বাচন হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের নির্বাচন হয় না। এমনকি পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারাও লুকিয়ে-চুপিয়ে ভোট কারচুপি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো প্রকাশ্যে বাহাদুরি করে কোথাও ভোট চুরি করে না।

আবদুল মঈন খান বলেন, যেভাবে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেভাবে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, একইভাবে তারেক রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।

লোকেরা নাম দিয়েছে ডামি নির্বাচন

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দলের দুই প্রধান নেতা খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর পাকিস্তানিদের মতো বর্বর আচরণ করার অভিযোগ করেন।

এগুলো করা হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন নামের একটা খেলা করার জন্য। কিসের নির্বাচন, বাংলাদেশের কোনো বিরোধী দল আজকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। আজকে যারা নির্বাচনী খেলায় যোগ দিয়েছে, তারা সবাই দেশের যিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রধান, তাঁকে পা ছুঁয়ে সালাম করে, তাঁর দোয়া নিয়ে নির্বাচনে নামতেছে এবং সবাই জানতেছে, পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে যে কোন দল কয়টা আসন পাবে, তার মধ্যে কোন নেতা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবে। ভাবতে পারেন, এটা কোনো নির্বাচন?’

নজরুল ইসলাম বলেন, লোকেরা বলে, একবার নির্বাচন হলো প্রার্থী ছিল না। আরেকবার নির্বাচন হলো রাতের বেলায় ভোট হয়ে গেছে। আর এবারের নাম দিয়েছে ডামি নির্বাচন। এই ডামি নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে সাত লাখ লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই নির্বাচন করার কী অর্থ আছে। যেভাবে নির্বাচন সাজানো হচ্ছে, তাতে তো সবাই জেনেই যাচ্ছে যে কোন আসনে কে নির্বাচিত হবে। এটা ঘোষণা করে দিলেই হয়। এর জন্য এই নির্বাচনী খেলার কী দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী কয়েক ঘণ্টার আয়োজনে বিপুল উপস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি হারিয়ে যায়নি, বিএনপি পালিয়ে যায়নি।