ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের স্থান নিয়ে পুলিশের যে ভাবনা
কয়েক দিনের আলোচনার পর আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল রোববার প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৯টি বিভাগীয় সমাবেশ শেষে ঢাকায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। তবে সেখানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিতে নারাজ সরকার। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ঢাকায় ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করলে নয়াপল্টনে এর সংকুলান হবে না। বিএনপি তুরাগ বা পূর্বাচলের কথা ভাবতে পারে। তবে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার দাবিতে অনড় অবস্থান জানিয়ে আসছিলেন বিএনপির নেতারা।
এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত বৃহস্পতিবার শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে জানান। তাতে রাজি না হওয়া বিএনপির নেতারা বলছিলেন, তাঁরা সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, নয়াপল্টন চেয়েছিলেন।
বিএনপির চাওয়া নয়াপল্টনের বদলে কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে। জবাবে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা বিবেচনা করে দেখলাম যে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশের অনুমতি দিলে এবং সেখানে কয়েক লাখ লোক জমায়েত হলে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাবে। পার্টি অফিসের সামনে ৫০-৬০ হাজার লোক ধরবে। এতে রাস্তাঘাট ব্লকড হবে। নগরবাসীর কষ্ট হবে। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।’
তা ছাড়া তাঁদের সমাবেশের আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন রয়েছে। এতে একদিকে যেমন সংঘাতের শঙ্কা তৈরি হবে, তেমনি তাঁরা সেখানে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাবেন না।
এরপর ছাত্রলীগের সম্মেলন দুই দিন এগিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এক দলীয় কর্মসূচিতে বলেন, ‘বিএনপি শুধু একটা অজুহাত দেখাচ্ছে যে ৮ তারিখে ছাত্রলীগের সম্মেলন, কী করে তারা ১০ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে। আজকে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সম্মেলন ৬ তারিখে নিয়ে এসেছেন।’
এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিএনপির চাওয়া নয়াপল্টনের বদলে কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে। জবাবে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা বিবেচনা করে দেখলাম যে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশের অনুমতি দিলে এবং সেখানে কয়েক লাখ লোক জমায়েত হলে, তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাবে।
পার্টি অফিসের সামনে ৫০-৬০ হাজার লোক ধরবে। এতে রাস্তাঘাট ব্লকড হবে। নগরবাসীর কষ্ট হবে। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে ও নাগরিক দুর্ভোগ যাতে না হয়, এসব দিক চিন্তা করে আমরা বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর পর এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে দলটির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানী) গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চায়নি। আমরা নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়েছি।’ ছাত্রলীগের সম্মেলন দুই দিন ধরে চলবে উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এর মধ্যে কেমন করে আমাদের সমাবেশ হবে? এটা সাংঘর্ষিক হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। তাই নয়াপল্টনই চাই।’
তবে ছাত্রলীগ সম্মেলন এগিয়ে আনায় মাঠ ও মঞ্চ প্রস্তুত করতে বিএনপির সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বলেছি, তারা তাদের কর্মসূচি ৮ তারিখের পরিবর্তে ৬ তারিখ করবে। ৬ তারিখ করলে বিএনপি চার দিন সময় পাবে মাঠ তৈরি করতে।’
‘আমরাও মাঠে থাকব’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের দিন রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলটির পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গতকাল পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা বাধা দিচ্ছি না, আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আগুন নিয়ে যদি খেলতে চান, যদি লাঠি নিয়ে খেলতে চান, তার সমুচিত জবাব দেব জনগণকে সঙ্গে নিয়ে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। কোথাও কোনো দেশে কেউ সরকার পতনের দাবি করছে না। অথচ যে সরকার উন্নয়নের রেকর্ড করেছে, সেই সরকারের পতন চায় বিএনপি। তিনি বলেন, ‘কিসের আন্দোলন? ১০ ডিসেম্বর আমরাও মাঠে থাকব। দেখা যাবে কত ধানে কত চাল।’
বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকলে সংঘাত দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রস্তুতি কী জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সংঘাত হবে কেন? আমরা তো (বিএনপিকে) শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দেব। তারপর যদি কেউ শান্তি ভঙ্গ করে, তাদের কঠোর হস্তে দমন করব।’
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা ডিএমপি এত দুর্বল না, আমাদের আদেশ ভায়োলেট করে, আদেশ অমান্য করে একটা কেউ কিছু করবে। জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য আমাদের যা যা করার দরকার, আমরা তা-ই করব।’