লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়ার আরও কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ চিকিৎসকদের
লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’–এ কার্ডিওলজিস্ট, আইসিইউ স্পেশালিস্ট, ইন্টারন্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট এবং ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা আরও কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী দু–একদিনের মধ্যে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্ব শেষ হবে।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, বড়দিন উপলক্ষে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখনো ছুটিতে আছেন। তাঁরা এসে খালেদা জিয়াকে দেখবেন। সে অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসাপদ্ধতি কি হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যরাও আছেন। তারাও ওনাদের (দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের) সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী জুবায়দা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শামিলা রহমান ও খালেদা জিয়ার নাতনিরা সার্বক্ষণিক পাশে থেকে তাঁর মানসিক একাকীত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
৭৯ বছর বয়স্ক খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, কিডনি সমস্যা, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন এসেছেন গতকাল বুধবার। কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গত বুধবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল সোয়া নয়টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে সরাসরি সেন্ট্রাল লন্ডনে দ্য ক্লিনিকে নিয়ে সেখানে ভর্তি করা হয়।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে তাঁকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মামলায় সাজা নিয়ে তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন; কিন্তু বিএনপি নেত্রীর লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু সেই সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। গত মঙ্গলবার কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।