উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অবশ্য এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসির একটি কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
২০১৬ সাল থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে মূলত দলীয় প্রতীকে। এর বাইরে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক সইযুক্ত একটি তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়।
আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪৮৩টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে জানিয়েছে, তারা এবার স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ফলে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। এরই মধ্যে ইসি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করার বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, ইসির আইন সংস্কারবিষয়ক কমিটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিমালায় কিছু সংশোধনী আনার জন্য একটি খসড়া তৈরির কাজ করছে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করার পাশাপাশি জামানতের টাকার পরিমাণ বাড়ানো এবং জামানত রক্ষার জন্য প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়ানোর বিষয় রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার বিষয় আলোচনায় রেখেছে ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটি।
এখন কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ বা সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এখানে সংশোধনী এনে ছয় ভাগের এক ভাগ বা ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত করার বিধান করার চিন্তা করা হচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভোটারের সমর্থনসূচক সইয়ের বিধান তুলে দিলে অনেক ভুঁইফোড় প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু জামানতের টাকা ও জামানত রক্ষার ভোটের হার বাড়ানো হলে ভুঁইফোড় প্রার্থী কমবে।
এ ছাড়া প্রার্থীদের শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার বিধান করা, ডিজিটাল মাধ্যমেও প্রচারণার সুযোগ দেওয়া, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্দিষ্টসংখ্যক লোকজন নিয়ে জনসংযোগের সুযোগ দেওয়াসহ আরও কিছু বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট কমিটি পর্যালোচনা শেষে বিধিতে সংশোধনী আনার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে। তারপর তা তোলা হবে নির্বাচন কমিশনের সভায়। কমিশন অনুমোদন করলে তা ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর বিধিমালায় সংশোধনী আসবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর আজ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনসূচক সইয়ের বিষয়ে ইসি সচিবালয় হয়তো কোথাও থেকে ‘ফিডব্যাক’ পেয়েছে যে এটা না রাখাই ভালো। আবার অনেকে বলছেন, বিধানটি না রাখলে সমস্যা হবে। এ বিষয়ে মিশ্র মতামত আছে। নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব আসার পর তাঁরা ভালো-মন্দ দিক বিবেচনা করবেন। আলোচনা না করে এখন এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।