ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ করতে পরাজিতরা চক্রান্ত করছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ করতে পরাজিতরা চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে তা প্রতিরোধে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সকালে বনানী কবরস্থানে তাঁর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর এই আহ্বান জানান ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি সকলকে দেশে প্রতিবিপ্লবের যে আশঙ্কা আছে সেই আশঙ্কা থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত সজাগ থেকে, রাস্তায় থেকে তাদের (পতিত স্বৈরাচারের) যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন… জনগণের কাছে আমার এই হচ্ছে প্রত্যাশা।’

গতকাল ভারতের দ্য প্রিন্ট নামের একটি সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার একটি বার্তার বরাতে খবর এসেছিল যে তিনি বলেছেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিতে রাজি হননি বলেই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাকোওয়াজ। নিজে যখন ব্যর্থ হন তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো তাঁদের একটা বৈশিষ্ট্য। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা ছিল ছাত্র-জনগণ-নাগরিকের একটা স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ…সেই গণজাগরণকে সুসংহত করাই আমাদের একমাত্র কাজ।’

তবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রোববার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তা দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে একটি বিবৃতি এক সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি একটু আগে তাঁর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা ঢাকা ছাড়ার পরে এ পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেননি।’

দ্রুত নির্বাচন দাবি

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা প্রকাশ করছি, নতুন যে অন্তর্বর্তী সরকার, তারা সমর্থ হবে একটা অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। আমি অনুরোধ করব, অতি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটা ক্ষেত্র তৈরি করা এবং সমস্ত বিপদ কাটিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে…নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’

ভারতে গণমাধ্যমে সংখ্যালঘুর হামলার খবর প্রসঙ্গে

ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে—এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশের এই গণজাগরণ, এই অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য, ব্যর্থ করার জন্য এই যে নতুন গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার, তাকে ব্যর্থ করার জন্য তারা এই মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্ব জনমত তারা কেউ এটাকে বিশ্বাস করবেন না।’

এর আগে সকালে বনানী কবরস্থানে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী সমবেত হন। ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয় কোকোর কবরে। ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট কোকোর জন্ম।

ক্রীড়াক্ষেত্রে আরাফাত রহমান কোকোর ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, কোকোকে অত্যাচারে-নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল ১/১১ সরকারের নির্যাতনের কারণে। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।’

বেলা ১১টায় বিএনপি মহাসচিব নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কোকোর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান সালাউদ্দিন, শামীমুর রহমান, রফিক শিকদার, এস এম জাহাঙ্গীর, যুবদলের নুরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাইফুল ইসলাম, রফিকুল আলম, আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।