আপনারা বলেছিলেন, সরকার নির্বাচন করতে পারবে না; কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে। তাহলে কি বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?
রুহুল কবির রিজভী: এ আন্দোলন শুধু বিএনপির একার নয়, চলমান আন্দোলনে পুরো দেশবাসীর স্বার্থ জড়িত। বলতে পারেন, সরকারের অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতনের মুখে আন্দোলন হয়তো একটু থমকে যেতে পারে, ব্যর্থ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের শপথ হচ্ছে, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, বহুদলীয় গণতন্ত্র আবার প্রতিষ্ঠিত করা। এটা একটা আদর্শিক লড়াই। কোনো আদর্শিক লড়াই কখনো ব্যর্থ হয় না; বরং জবরদস্তি ও প্রহসনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে। এই আহ্বানের সমর্থনে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকবে, নাকি ভিন্ন কোনো চিন্তা আছে।
রুহুল কবির রিজভী: একটি আন্দোলনের নানা পর্যায়ে কর্মসূচি বিভিন্ন ধরনের হয়। এ মুহূর্তে আমরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে হরতাল-অবরোধসহ প্রহসনের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগের কর্মসূচি করছি। আমরা যে একটা দুর্বৃত্ত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সেটা আমরা লিফলেটে জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। সাধারণ মানুষ তা মন থেকে গ্রহণ করছে। এর পর পরিস্থিতিই বলে দেবে, কর্মসূচি কী হওয়া উচিত।
আপনারা নির্বাচন ঠেকানোর কথা বলেছিলেন, আসলে নির্বাচন ঠেকানো কি সম্ভব?
রুহুল কবির রিজভী: আমরা এই প্রহসনের নির্বাচনে ভোটাররা যাতে না যান, সে জন্য অনুরোধ করছি। এখন রাষ্ট্রশক্তি কী করবে না করবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে এবার জনগণকে ভেলকি দিয়ে, অনাচার করে নির্বাচন করতে পারবে না—এটা আমাদের বিশ্বাস।
জনীতিতে আলোচনা আছে—বিএনপির আন্দোলনে সাংগঠনিক শক্তির চেয়ে বিদেশনির্ভরতা বেশি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সরকারকে চাপে ফেলবে, তখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে—এমন একটা কথা আলোচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে কী বলবেন।
রুহুল কবির রিজভী: পৃথিবীর দেশে দেশে যখন কোনো ন্যায়সংগত বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে ওঠে, তখন বিদেশি শক্তি বা রাষ্ট্র তাতে সংহতি জানায়, যদি সেসব দেশ গণতান্ত্রিক হয়। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধেও বহু দেশ সমর্থন জানিয়েছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সমর্থন দিতেই পারে। বাংলাদেশের জনগণের এখনকার যে আন্দোলন, সেটি মূলত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তার জন্য। এটি একটি ন্যায়সংগত দাবি এবং আন্দোলন। জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলনে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সংস্থার সংহতি বিএনপি বা আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য উৎসাহের—এটা নির্ভরতা নয়; বরং এই সমর্থন নিপীড়ক সরকারের জন্য বিপজ্জনক। বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর বলেই গত দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ১৩ থেকে ১৪ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করা হয়েছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র অমানবিক রূপ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপি যদি বিদেশনির্ভরই হতো, তা হলে সরকারের এত নির্যাতন-নিপীড়ন কেন।
বিএনপির আন্দোলনে এখনো সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়নি বলে কথা আছে।
রুহুল কবির রিজভী: ধরুন, আজ ছাত্রদল বা যুবদলের একজন নেতা মিছিল করলেন। কাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর নাম-পরিচয় বের করে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, গুম করছে। এমন একটা ভয়ানক পরিস্থিতিতে জনগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজপথে আসে না। জনগণকে সংগঠিত করে রাজনৈতিক দল। কিন্তু যাঁরা সংগঠিত করে আনেন, তাঁরা এখন গান পয়েন্টে (বন্দুকের মুখে)। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি সে কাজটি করছে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, ফল আসবেই।
আপনারা বলছেন, নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না; কিন্তু সরকার এসব আমলে নিচ্ছে না। তারা নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়াসহ নানা কৌশল নিচ্ছে এবং বলছে, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কী বলবেন?
রুহুল কবির রিজভী: প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, সরকার একটা জবরদস্তির নির্বাচন করছে। আর এটি করতে গিয়ে সরকার যে কী কী করছে, সেটা এখন সবাই জানে। এবার আর গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে কিছুই ঢেকে রাখা যাবে না।
নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনের গুরুত্ব কতটা থাকবে?
রুহুল কবির রিজভী: এটি দীর্ঘ সময়ের একটি ধারাবাহিক আন্দোলন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সেলিম জাহিদ