জাপার ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণে’ জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় পার্টির (জাপা) সিদ্ধান্ত গ্রহণে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর দলীয় কার্যক্রম গ্রহণেও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। জাপা থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া নেতা জিয়াউল হকের দায়ের করা এক মামলার শুনানি নিয়ে গত সোমবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক এ আদেশ দেন।
একই আদালতে আরেক মামলায় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে বেআইনি ঘোষণার ডিক্রি চেয়েছেন দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক নেতা মসিউর রহমান (রাঙ্গা)। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান ২৩ অক্টোবর মামলাটি করেন। আদেশে আদালত কেন দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলেছেন।
জিয়াউল হক ও মসিউর রহমানের আইনজীবী আদালতের আদেশের বিষয়টি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
জিয়াউল হক গত ৪ অক্টোবর জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। একই মামলায় দল থেকে জিয়াউল হকের বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০এর উপধারা ১(১) অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়েছে। মামলায় জি এম কাদের ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সচিব, জাপার মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদককে বিবাদী করা হয়। জিয়াউল হক জাপা দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জিয়াউল হক ও মসিউর রহমানের আইনজীবী গোলাম মাসুদ করিম প্রথম আলোকে বলেন, জি এম কাদের জাপার স্বঘোষিত চেয়ারম্যান। তিনি অন্যায়ভাবে তাঁর মক্কেল জিয়াউল হককে বহিষ্কারাদেশ দেন।
মামলায় জিয়াউল হক ও মসিউর রহমান দুজনেই দাবি করেন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ছয় মাস আগে ১ জানুয়ারি জি এম কাদের তাঁর বড় ভাই এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করান। এরপর জি এম কাদের প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, পরে চেয়ারম্যান হন, যা ছিল গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। এ নিয়ে দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এরশাদ ২০১৯ সালের ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ৪ মে পুনরায় তাঁকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। তখন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি স্বাভাবিক বিবেচনা প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন না বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জি এম কাদের। দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান ঘোষণার কোনো বিধান নেই।
মামলায় মসিউর রহমান দাবি করেন, জি এম কাদের নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান দাবি করে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলন ডাকেন। এর আগে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা কেন বেআইনি হবে না, মর্মে রুল দেন হাইকোর্ট। এটি বিচারাধীন অবস্থায় দলের কাউন্সিল করেন জি এম কাদের। সম্মেলনে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না।