ডা. মিলনের ৩৪তম শাহাদতবার্ষিকী
গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ যেন অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়: ড. কামাল হোসেন
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন কোনো অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়। এ বিষয়ে সচেতন থাকতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। আলাদাভাবে বক্তব্য দিলে বা কাজ করলে দেশের অবনতি ঘটবে। এটা দ্রুত উপলব্ধি করতে হবে। অনেক সময় চলে গেছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে, ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আজ বিকেলে ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ৩৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এ কথাগুলো বলেছেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ সভাটির আয়োজন করে। দলটির সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া এতে সভাপতিত্ব করেন।
১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর দেশের আপামর জনগণ প্রত্যাশা করেছিল, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। মানুষ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য এবং রুগ্ণ রাজনীতির কারণে মানুষের সেই স্বপ্ন অচিরেই ভঙ্গ হয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তিন জোটের যে ঐতিহাসিক রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছিল, পরবর্তী সরকারগুলো তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই গণতন্ত্রের পরিবর্তে জনগণকে স্বৈরতন্ত্রের শাসন লক্ষ্য করতে হয়েছে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বারবার এ দেশের জনগণ সুশাসনের পরিবর্তে দুঃশাসনের কবলে নিষ্পেষিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দেড় সহস্রাধিক শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা যে কারণে জীবন দিয়েছেন, তাঁদের স্বপ্নের-আকাঙ্ক্ষার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সেই আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রাণ উৎসর্গকারী ডা. মিলন থেকে আবু সাঈদ পর্যস্ত সব শহীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বিএনপির সহসভাপতি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, এই শহীদদের পথপরিক্রমা দেখলে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা, দেশপ্রেম এবং রাষ্ট্রের মালিকানা চর্চার ইচ্ছা বোঝা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নতুন সাংবিধানিক সরকার না আসা পর্যন্ত জরুরি দায়িত্ব পালন করাই এ সরকারের কাজ। আমরা চাই “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার” এ শব্দটির সারবস্তুকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করুন। এ ক্ষেত্রে জানাবোঝা বা মতবিনিময়ের পার্থক্য তৈরি হলে আন্দোলনের মাধ্যমে গড়া জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে পারে। তাঁদের নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাইতে অন্য কোনো কাজ অগ্রাধিকার পেতে পারে না।’
বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে প্রধান শক্তি হলো চারটি। সেগুলোকে নির্দলীয় চেহারার ছাত্র, সাবেক ক্ষমতাসীন দলের সংগ্রাম, ধর্মীভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং অসাম্প্রদায়িক বাম দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ফ্যাসিবাদকে মাথা তুলতে না দেওয়াই ছিল সবার মূল সুর।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল নীতিনিষ্ঠের শক্তি সমাবেশ না ঘটাতে পারলে আমরা আবার আগের জায়গায় ফেরত যাব। জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।’
সভাপতির বক্তব্যে শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল ড. ইউনূসের সরকারকে সমর্থন করেছে। কিন্তু এ সমর্থন তারা নিতে পারছে না। এটা নিজ থেকে সক্রিয় (প্রো-অ্যাক্টিভ) সরকার না। তা না হলে ইসকন, আইনজীবী হত্যাকাণ্ড, পত্রিকা অফিসের সামনে অসভ্যতাসহ এসব ঘটনা কীভাবে ঘটে। দেশের সব রাজনৈতিক দল উচ্ছেদ হওয়া দলটির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় একত্রিত থাকতে চায়। কিন্তু সরকার সেটা করতে পারছে না।’
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য করিম সিকদার, মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, নাসিরুল হক নওয়াব, রোকনুজ্জামান রোকন, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আবদুস সালাম খোকন, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মনজুর আহমেদ মনজু।