ঢাকাসহ ১০টি বড় শহরে বিএনপির সমাবেশ আজ
আজ আবার পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে মাঠে নামছে বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এবার আওয়ামী লীগ শুধু রাজধানীতে নয়, ঢাকার বাইরেও দুটি বিভাগীয় শহর খুলনা ও রংপুরে আজ বিরোধী দলের পাল্টা সমাবেশ করবে।
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় শহরে একযোগে সমাবেশ করবে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও জোট। বিএনপি তাদের সাংগঠনিক ১০টি বিভাগীয় শহরেই বড় জমায়েত করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। ঢাকার সমাবেশ হবে বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে।
ক্ষমতাসীন দলের ‘উসকানিমূলক পাল্টা’ কর্মসূচির প্রতিবাদে এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে এ সমাবেশ করবে বিএনপি এবং তাদের সমমনা দল ও জোট। গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশের পর এটি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের পঞ্চম কর্মসূচি। আজকের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী দলগুলোর নেতারা।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপি গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় চার দিনের যে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে, সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিএনপির নেতারা এটিকে কার্যকরী জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বলে মনে করছেন। এ কারণে পরবর্তী যুগপৎ কর্মসূচি হিসেবে ‘গণপদযাত্রা’ কর্মসূচির প্রস্তাব এসেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে। এর আগে রাজধানীর মিরপুর থেকে পুরান ঢাকা পর্যন্ত এ ধরনের একটি কর্মসূচি করবে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এই জোটের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত গণসংযোগ ও পথসভা করবেন।
ঢাকার বাইরেও পাল্টা কর্মসূচি
আবারও বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আজ শনিবার ঢাকার রাস্তায় থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে অন্যবার কেবল ঢাকায় পাল্টা কর্মসূচি দিলেও এবার ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে খুলনা ও রংপুরে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আজ বেলা তিনটায় কামরাঙ্গীরচরের ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল মাঠে সমাবেশ করবে। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
যুবলীগ শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় আজ বেলা ১১টায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম তাঁদের সমাবেশকে পাল্টা কর্মসূচি বলতে রাজি নন। তিনি গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে বিএনপি অসত্য তথ্য তুলে ধরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সে কারণে সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য আমরা দলীয়ভাবে কর্মসূচি পালন করছি।’ কিছুদিন ধরে বিএনপির কর্মসূচি ধরে একই দিনে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ।
বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির প্রস্তুতি
আজকের বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে বিএনপি সব সাংগঠনিক বিভাগ এবং জেলায় প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ করেছে। এ সমাবেশকে দলের নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকার সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন। এ ছাড়া কুমিল্লায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রাজশাহীতে মির্জা আব্বাস, খুলনায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরিশালে আবদুল মঈন খান, চট্টগ্রামে নজরুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিলেটে সেলিমা রহমান, ফরিদপুরে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা ও রংপুরে মো. শাহজাহান প্রধান অতিথি থাকবেন। এ ছাড়া দলের নির্বাহী কমিটির নেতাদেরও নিজ নিজ বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার মতো অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশও বেলা দুইটায় অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির পাশাপাশি অন্য দল ও জোটগুলো রাজধানীর পাঁচটি স্থানে সমাবেশ করবে।
বিরোধী জোটগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, সাতদলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে। পরে তারা মিছিলও বের করবে। এ ছাড়া ‘১২-দলীয় জোট’ বেলা ১১টায় বিজয়নগর পানি ট্যাংকের পাশে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে, একই সময়ে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ পুরানা পল্টনে সমাবেশ করবে। বেলা আড়াইটায় এফডিসি-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি এবং বিকেল চারটায় মতিঝিলের নটর ডেম কলেজের বিপরীত পাশে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি সমাবেশ করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষকে সম্পৃক্ত করে, এমন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকার পতনের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আশা করছি মাঠ থেকেই বৃহত্তর কর্মসূচি উঠে আসবে।’
আজ জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ১১ ফেব্রুয়ারি তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় ‘আগ্রাসনের’ প্রতিবাদে ঢাকাসহ জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করবে। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তাঁদের মতো করে মাঠে থাকবেন।
পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, উত্তেজনা
বিভাগীয় শহরে কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি রংপুরে আজ বেলা দেড়টায় নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। তবে একই সময়ে রংপুরে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নগর এবং এর আশপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
খুলনায় আজ বেলা দুইটা থেকে নগরের কে ডি ঘোষ সড়কে নগর ভবনের সামনের অংশে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আজ বেলা তিনটায় খুলনার শিববাড়ী মোড়ে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম (মনা) প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মী যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থল শিববাড়ী মোড়ের সামনে দিয়ে আসতে হবে। ফলে উত্তেজনাকর কোনো পরিস্থিতি হতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে তাঁদের।
সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই ময়মনসিংহে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে বলে দলটি অভিযোগ করেছে। আজ বেলা দুইটায় ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে।
এদিকে ফরিদপুর শহরের ভেতরে বিএনপিকে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। ফরিদপুর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে এ সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি।