নয়াপল্টনেই গণসমাবেশের সিদ্ধান্ত বিএনপির
২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে গণসমাবেশ করতে বলেছে পুলিশ। বিএনপি আগের সিদ্ধান্তে অনড়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। যদিও দলটিকে নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলেছে পুলিশ। বিএনপি সূত্র বলছে, তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অচিরেই তা পুলিশকে জানিয়ে দেবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে চিঠি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিএনপির আবেদন অনুযায়ী নয়াপল্টনে সমাবেশ করলে ‘যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি’ হবে বিধায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গণসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে ২৬টি শর্ত দেওয়া হয়।
বিএনপির ঢাকার এই বিভাগীয় সমাবেশের স্থানকে কেন্দ্র করে সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রধান দুই দলের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে। এ নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরদিন গতকাল ডিএমপি তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে বিএনপিকে জানিয়ে দেয়। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
রাতে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করতে চাই। ওটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
বিএনপির সূত্র জানায়, তারা ডিএমপির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবে। সেটা তাদের যুক্তিসহ লিখিতভাবে ডিএমপিকে জানাবে নাকি সংবাদ সম্মেলন করে বলবে, সেই সিদ্ধান্ত গতকাল পর্যন্ত হয়নি।
বিএনপি ১৩ নভেম্বর নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করে। এরপর তাদের ডেকে বিকল্প স্থান প্রস্তাব করার অনুরোধ করে ডিএমপি। বিএনপির ২০ নভেম্বর আবারও চিঠি দিয়ে নয়াপল্টনেই গণসমাবেশের অনুমতি চায়। এরপর ২৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এর আগে ১৯ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায়ও বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে অন্য কোথাও সমাবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সর্বশেষ গতকাল ডিএমপি আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। তাতে যে ২৬ শর্ত দেওয়া হয়, তার প্রথমটি হচ্ছে, এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, এই উদ্যানের মালিক গণপূর্ত বিভাগ। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে গণপূর্তের অনুমতি নিতে হয়। গণপূর্ত যেসব শর্ত দেবে, সেটাও মেনে চলতে হবে বলে ডিএমপির দ্বিতীয় শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজল্যুশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে স্থাপন এবং আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক/সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না। উদ্যানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না। সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে। আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়াসহ যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না। সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে ইত্যাদি।
এই বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো চিঠি দিয়েছি নয়াপল্টনের জন্য। ডিএমপি শর্ত দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য। তাদের শর্তের সঙ্গে আমাদের সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নাই।’ তিনি বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, সে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।