এম এ জি ওসমানী বলেছিলেন, ভারত যদি সহযোগিতা না-ও করত, তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো: রিজভী

রাজধানীর শান্তিনগরের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে আজ বুধবার সকালে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রুহুল কবির রিজভীছবি: সংগৃহীত

‘মুক্তিযুদ্ধে ভারত বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভারত যদি সহযোগিতা না-ও করত, তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। এ কথাটি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানী বলেছিলেন।’

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শান্তিনগরের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

ভারত সহযোগিতা না করলেও বাংলাদেশ কেন স্বাধীন হতো, তার কারণও উল্লেখ করেন রিজভী। এম এ জি ওসমানীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কারণ যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোনো রাজনীতিবিদ নিতে পারেননি, সেই সময়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একজন তরুণ মেজর (জিয়াউর রহমান) বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যে তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন, সেই তরঙ্গে অন্যান্য সেনা অফিসার, বাংলাদেশের মানুষেরা উদ্বুদ্ধ হন এবং তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসকে ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে দাবি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করেছেন মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে ফ্রান্সের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা যখন যুদ্ধ করছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, তখন ফ্রান্স আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল, সেই ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮১ সালে তাদের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত। কই ফ্রান্স তো বলে না এটা তাদের বিজয় দিবস। আমেরিকানরা পালন করে তাদের বিজয় দিবস, তাদের স্বাধীনতা দিবস। বিশ্ববাসী জানে, বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিল, ওই জীবনের কি কোনো মূল্য নেই?’

ভারতের সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অহংকার করে নিজেদের প্রভু মনে করে। তা না হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ই ডিসেম্বরের দিন বললেন ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়। তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখণ্ডকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করলেন। তার মানে, আমাদের যে ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিল, সেটিকে তাঁরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে চান।’

রিজভী বলেন, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, হামিদুর রহমান, এই যে বীরশ্রেষ্ঠ—তাঁরা কিসের জন্য জীবন দিয়েছেন? তাঁরা কি ভারতের বিজয়ের জন্য জীবন দিয়েছেন? নাকি একটি স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা যুদ্ধ করেছেন।

ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যুদ্ধ করে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তারা (ভারত) মনে করে চিরদিন আমরা তাদের গোলাম হয়ে থাকব, অনুগত হয়ে থাকব। আমি দিল্লির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন, তাহলে ভারত থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার কেন? শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, এই মনঃকষ্টে আপনাদের মিডিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। আপনাদের এত প্রেম কেন শেখ হাসিনার বিষয়ে।’

রিজভী বলেন, ‘আমরা ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করতে চাই না। বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন হয়েছে, এই পরিবর্তন ১৬-১৭ বছরের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ১৬ বছর দিল্লি ছাড়া হাসিনাকে দুনিয়ার কোনো দেশ সমর্থন করেনি। তাই এই বিষোদ্‌গার যত দিন করবেন, আমাদের প্রতিবাদ এবং আমাদের যে রাজনৈতিক প্রতিরোধ আমরা করে যাব।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।