উপজেলা নির্বাচনে কাউকে সমর্থন নয়, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কমাতে চায় আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ

তৃণমূলে বিভেদ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এখন একই উপজেলায় বিপুল সংখ্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে আওয়ামী লীগ। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী কম হলে নিজেদের জেতার সম্ভাবনা বাড়ে, দলীয় কোন্দলও কম হয়। তবে কোথাও যাতে একক প্রার্থী করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে না যায়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে তৃণমূলকে।

তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠকে উপজেলায় দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা কম রাখার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

তবে দলীয় প্রতীক না দিয়ে বা কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন না দিয়ে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা কীভাবে কমানো যাবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

বৈঠক শেষে খুলনা অঞ্চলের তৃণমূলের অনেক নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দল থেকে একক প্রার্থী ঠিক করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কেউ কেউ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেন। তখন ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের জানিয়ে দেন, একক প্রার্থী সমর্থনের সুযোগ নেই। তবে যতটা সম্ভব দলের নেতারা প্রার্থী যাতে কম হয়, সেই বিষয়ে কাজ করা হবে।

যদিও আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচনকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর প্রধান লক্ষ্য বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশলের কারণে তৃণমূলে সৃষ্ট বিভেদ কমানো।

উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ করবেন না। আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, মনোমালিন্য-এসব যদি দৃশ্যপটে হাজির করা হয়, তাহলে তাঁদের চলার পথ কঠিন হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

কিন্তু এখন উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার কৌশলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভেদ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনগুলোর সাত-আটজন পর্যন্ত ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন। কোনো কোনো উপজেলায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তাঁদের সন্তান, ভাই, শ্যালকসহ নিকটাত্মীয়দেরও প্রার্থী করছেন। এতে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি বাড়ছে।

আরও পড়ুন

এমন পরিস্থিতির বিবেচনায় আওয়ামী লীগ এখন প্রতিটি উপজেলায় দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা কম রাখতে চাইছে। তবে দলীয় প্রতীক না দিয়ে বা কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন না দিয়ে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা কীভাবে কমানো যাবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা এই বিষয়ে কাজ করছেন বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিভেদ দূর করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ ও ৩১ মার্চ রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গতকাল বৈঠক হয় খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে।

‘দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় দল কঠোর হবে’

খুলনার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ যেন না করে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ করবেন না। আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, মনোমালিন্য-এসব যদি দৃশ্যপটে হাজির করা হয়, তাহলে তাঁদের চলার পথ কঠিন হয়ে যাবে।’

দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা কঠোর হবেন বলেও উল্লেখ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দলে কিছু শাস্তি শেখ হাসিনা নানাভাবে দিয়ে দিয়েছেন। কতজন অনেক বড় জায়গা থেকে নেমে গেছেন। শুধু জেলে পুরলেই শাস্তি, গায়ে আঘাত করলেই শাস্তি, তা নয়। তিনি উল্লেখ করেন, শাস্তি অনেক রকম হয়। এবার নেত্রী যে কৌশল নিয়েছেন, দলের মধ্যেও কেউ ফ্রি স্টাইল করলে শাস্তি কিন্তু পেতেই হবে। সব নোট করে রাখেন, সময়মতো ব্যবস্থা নেবেন।’

আরও পড়ুন

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ইলেকশন করেছি, স্বতন্ত্রদের ভোট করতে দিয়েছি, এতে কী হয়েছে? নতুন সংসদ বসেছে, নতুন সরকার হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বালা-মসিবতের কথা অনেকে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সে সংকট কাটিয়ে উঠেছি। তারা (বিএনপি) ভেবেছিল ইলেকশন হলেও দুর্ভিক্ষ হবে, সরকার পাঁচ দিন টিকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’

উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিভেদ দূর করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ ও ৩১ মার্চ রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গতকাল বৈঠক হয় খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে।

মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচি

রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের বৈঠকে যেভাবে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, খুলনার ক্ষেত্রে তা হয়নি। খুলনা অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচি।

বৈঠক সূত্র জানায়, এবার ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র চত্বরে বড় সমাবেশ করার ওপর জোর দেওয়া হয় গতকালের বৈঠকে। এই বিষয়ে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর নেতাদের সাধ্যমতো লোক জমায়েত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে কেউ কেউ অত্যধিক গরমে মানুষের কতটা উপস্থিতি হবে, সেই শঙ্কা প্রকাশ করেন।

মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই দিবস উপলক্ষে বিএনপিসহ বড় দলগুলোর কারও অনুষ্ঠানমালা নেই। আওয়ামী লীগ পালন করবে। কারণ, এটি আমাদের জন্মের চেতনা। এই চেতনা আওয়ামী লীগকে ধারণ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।