বিএনপির সমাবেশ আজ, পাল্টা সমাবেশ আওয়ামী লীগের 

‘আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে’ এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ শনিবার বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১২টি মহানগরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। ১২টি সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেবেন।

এদিকে যথারীতি আওয়ামী লীগেরও আজ পাল্টা কর্মসূচি রয়েছে। তারাও ঢাকাসহ ১২টি মহানগরে সমাবেশ ও আলোচনা সভার কর্মসূচি নিয়েছে। তবে এসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। 

মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির প্রায় প্রতিটি কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ বা দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থেকেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির যেকোনো কর্মসূচির দিন সতর্কতা হিসেবে পাল্টা কর্মসূচি রাখার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি না থাকলে ‘শান্তি সমাবেশ’ নাম দেওয়া হয়। যদিও দলটির নেতারা এটাকে পাল্টা কর্মসূচি বলতে রাজি নন।

কিছুদিন ধরে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে থানা, জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি করে বিএনপি। এরপর সব মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মহানগরগুলোতে আজ প্রতিবাদ সমাবেশ করছে।

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে পরবর্তী যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করার সম্ভাবনা কম। আগামী শুক্রবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। তার আগে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। রোজার মাসে বিএনপির একাধিক ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা আছে। এ ছাড়া আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোরও পৃথক ইফতার অনুষ্ঠান থাকবে। ফলে পুরো রোজার মাসই বিএনপি ব্যস্ত থাকবে ঘরোয়া কর্মসূচিতে।

অবশ্য গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেছেন, আগামী শুক্রবারের আগেই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে। রমজান মাসে ইফতারের পাশাপাশি এক-দুটি রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখা যায় কি না, সেটি নিয়ে তাঁরা ভাবছেন। 

বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ ১২টি মহানগরে বিএনপি আজ সমাবেশ করবে। ঢাকায় সমাবেশ হবে রাজধানীর নয়াপল্টনে বেলা দুইটায়। এ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির আরও পাঁচজন সদস্য বিভিন্ন মহানগরে সমাবেশে যোগ দেবেন।

বিএনপি জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সমাবেশের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, খুলনায় আবদুল মঈন খান, কুমিল্লায় নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রংপুরে সেলিমা রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। এ ছাড়া সিলেটে ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহম্মদ, বরিশালে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, গাজীপুরে বরকতউল্লা, ফরিদপুরে মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহীতে এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ময়মনসিংহে শামসুজ্জামান প্রধান অতিথি থাকবেন।

বিদ্যুৎ-গ্যাস, চাল-ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিলসহ ১০ দফা দাবিতে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সব কর্মসূচিতেই দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকছেন।

বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য দল ও জোটও আজ ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বেলা ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ করবে। এরপর তারা মিছিল করবে।

এ ছাড়া ‘১২–দলীয় জোট’ বেলা ১১টা বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে, একই সময়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পল্টনের আল–রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, গণফোরাম মতিঝিলের নটর ডেম কলেজের পাশে, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, এলডিপি বেলা তিনটায় এফডিসি-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ঢাকায় তিনটি কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ধোলাইখাল কাজী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বেলা তিনটায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ মিরপুরের ভাষানটেক মোড়ে জনসমাবেশ করবে। এটিও বেলা তিনটায় অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের উদ্যোগে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ও যুবলীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সমাবেশ নামে যে কর্মসূচিগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে প্রতিটি ওয়ার্ডের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি বড় জমায়েত করার বিষয়ে দলীয় সংসদ সদস্যদেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্য মহানগরগুলোতে সমাবেশ বা আলোচনা সভা করার ব্যাপারে সমন্বয় করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা।