আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আজ তোমরা বড় বড় কথা বলছ। রাজপথে সব মোকাবিলা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে খেলা হবে।’ নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর ওসমানী স্টেডিয়ামে আজ রোববার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশের আয়োজন করছে বিএনপি। বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীর উপস্থিতিতে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় গণসমাবেশ করেছে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, গণ–আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানো হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনর্বহাল ছাড়া বিএনপি ভোটে যাবে না।
বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুনিয়ার কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। অন্য দেশে যে ব্যবস্থায় নির্বাচন হয়, এখানেও সেভাবে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিরুদ্ধে খেলা হবে। আজ আমাদের লক্ষ লক্ষ লোক, এই লক্ষ লক্ষ লোক নিয়ে খেলা হবে। ডিসেম্বরে জনতার গর্জনধ্বনি শুনতে পাবেন। এরপর আসবে সাগরের গর্জন শেখ হাসিনার।’
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা শেখ হাসিনা। আপনার নেতা কে? যিনি বিগত ওয়ান–ইলেভেনের সময় আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার মতো সৎ মানুষ কেউ নেই।’
এ সময় নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। বৈশ্বিক সংকটের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ সংকটের আগে দেশে বিদ্যুৎ–সংকট ছিল না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাতের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কার্যকরী পরিষদ সদস্য রিয়াজুল কবির, সাহাবউদ্দিন ফরাজি, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি।
নেতৃত্বে পরিবর্তন নেই
সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাতকে বহাল রেখে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। সেই সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সৎ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কমিটি যাবে নেত্রীর কাছে, নেত্রী আমাকে দেবেন। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে কমিটি দেওয়া হবে। সৎ ও ত্যাগীদের কমিটিতে রাখতে হবে।’
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা সম্মেলনস্থলে এসে উপস্থিত হন। জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক। সম্মেলনের নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।