জাপায় রওশন এরশাদ– জিএম কাদেরের বিভক্তি আবার প্রকাশ্যে
সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদ থেকে মসিউর রহমানকে সরিয়ে দিতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন জি এম কাদের। পাল্টা চিঠি দেন রওশন এরশাদ।
সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদে দলের সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমানকে রাখা ও সরানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি চলছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। মসিউর রহমানকে সরিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামকে স্থলাভিষিক্ত করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
অন্যদিকে মসিউরকে স্বপদে বহাল রাখতে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এখন আবার সামনে এল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বা বিভক্তি। এর আগে একবার মসিউরকে সরিয়ে কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ করতে চিঠি পাঠানো হয়েছিল; সেটিও কার্যকর হয়নি।
জাপার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ মে এক চিঠিতে জি এম কাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দলের নেতা ফখরুল ইমামকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ করার ব্যাপারে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার জাপার একটি প্রতিনিধিদল স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি আবারও অবহিত করে। অন্যদিকে আগের দিন বুধবার স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। চিঠিতে রওশন এরশাদ চলমান একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মসিউর রহমানকে চিফ হুইপ পদে রাখার কথা জানান।
একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল। শুরু থেকেই মসিউর রহমান বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদে আছেন। কিন্তু জাপার অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এবং দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন মসিউর রহমান। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মসিউরকে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়ামসহ সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। এর কয়েক দিন পর তাঁকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদ সরিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদকে স্থলাভিষিক্ত করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন জাপার চেয়ারম্যান। কিন্তু সেটি তখন কার্যকর হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, জাপার একজন নেতার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছিলেন। মসিউরকে সরিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ করার ব্যাপারে স্পিকারকে যখন চিঠি দিয়েছিলেন জি এম কাদের, তখন আদালতের ওই আদেশ বহাল ছিল। সে কারণে জি এম কাদেরের সই করা চিঠি তখন কার্যকর করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কাজী ফিরোজ রশীদও দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে এই পদে যেতে অনাগ্রহ দেখান। এ অবস্থায় গত মে মাসে অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় দলের যৌথ সভায় ফখরুল ইমামকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় জাপা। কিন্তু রওশন এরশাদ স্পিকার বরাবর এর পাল্টা চিঠি দেন। সেই চিঠি গত বুধবার মসিউর রহমান নিজেই স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেন।
এ বিষয়ে মসিউর রহমান বলেন, বিরোধীদলীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও হুইপ কে হবেন, তা নির্ধারণ করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। দলের চেয়ারম্যান তাঁর পরামর্শে কাজ করবেন।
যদিও জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ওনার (রওশন এরশাদ) এই এখতিয়ার নেই। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটি পার্টির চেয়ারম্যানের এখতিয়ার। দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জাপার মহাসচিব বলেন, মসিউর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এখন দলের কেউ নন।