জাতীয় পার্টিতে হতাশা ও বিতর্ক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের মনে করেন, সরকার ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এত কমসংখ্যক আসনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ে হতাশার পাশাপাশি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতার পরও ভোটের ফলাফলে তার প্রতিফলন না থাকায় দলের একটি অংশ সরকারের ওপর বিরক্ত। জাপা এবারের নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। এই বিপর্যয়ের জন্য নেতা-কর্মীদের একটি অংশ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দায়ী বলে মনে করছে। বর্তমান সংসদে দলের সংসদ সদস্য রয়েছেন ২৩ জন। এবার তার অর্ধেক আসনও পায়নি জাপা। 

নির্বাচনে বিপর্যয় নিয়ে দলে নানামুখী আলোচনা চলছে। নেতা–কর্মীদের বড় একটি অংশের বক্তব্য হচ্ছে, এবার নির্বাচনে যাওয়াই ঠিক হয়নি। 

তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ অনেক নেতার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সরকার ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন হয়েছে। ফলাফল ছিল অনেকটাই নির্ধারিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার আসন সমঝোতা সঠিক ছিল না। যে দুজন নেতাকে সমঝোতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা দলীয় স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। ঢাকা গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আসন থেকে জাপাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

জাপার পক্ষ থেকে আসন সমঝোতার জন্য দায়িত্বে ছিলেন দলে জ্যেষ্ঠ কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক। তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে চেয়ারম্যান (জি এম কাদের) সব জানেন। এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন।

ভোটে নানা অনিয়মের ঘটনার পাশাপাশি নির্বাচনে যাওয়া না–যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে জাপায় আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, দলীয় প্রধান জি এম কাদের অসংখ্যবার বলেছেন, এই সরকারের অধীন নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হবে না। তিনি বছরব্যাপী সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে এলেও শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দলে আলোচনা আছে, অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি মানুষ তা পছন্দ করেনি। এর প্রভাব পড়েছে ভোটে।

আরও পড়ুন

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না, জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা এখনই মূল্যায়ন করা যাবে না। সামনের দিনগুলো দেখতে হবে।

তবে, জাপার শীর্ষ নেতৃত্বসহ নির্বাচনে পরাজিত নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, নির্বাচনে জালিয়াতি ও জোরজবরদস্তি হয়েছে। প্রচারের শুরু থেকে জাপার প্রার্থীদের স্বস্তিতে মাঠে থাকতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। আর ভোটের দিন সকালে কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার পর ভোটেও জালিয়াতি করা হয়েছে—এমন অভিযোগ করছেন দলটির নেতারা।

জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সঠিক নির্বাচন হয়নি। একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আবার কোথাও ঢালাওভাবে অনিয়ম করতে দেওয়া হয়েছে। কাকে পাস-ফেল করানো হবে, তা কোথাও কোথাও নির্ধারণ করা ছিল। অর্থাৎ নির্বাচনটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে।

এর আগে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন দুপুরে জি এম কাদের তাঁদের নির্বাচনে নিয়ে এসে কোরবানি করা হবে কি না, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিকদের কাছে। যদিও ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের অসহযোগিতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়, ভোটের মাঠে হুমকি ও চাপের কথা জানিয়ে দলের ১৯ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। 

‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না’

ভোটের পর গতকাল সকালে রংপুরে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গেও তিনি মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানান।

জি এম কাদের বলেন, ‘সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। যেটি আশঙ্কা করেছিলাম, সেটিই হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে, সেটিই হয়েছে। যার জন্য নির্বাচনে কেউই আসতে চাইছে না। আমার বিশ্বাস, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।’